বারাক ওবামা বলেছেন, দূষণমুক্ত জ্বালানিতে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের মতো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।
জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের (কপ ২৬) দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হয়েছে আলোচনার একটি খসড়া সারাংশ প্রকাশের মধ্য দিয়ে, যার আলোকে সারপত্র চূড়ান্ত হবে আগামী শুক্রবার। তবে এই খসড়াকে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস ব্যতিক্রমীভাবে দুর্বল বলে অভিহিত করে বলেছে যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হবে, এতে তার উল্লেখ নেই।
গতকাল সোমবার সম্মেলনে অবশ্য সবার নজর কাড়েন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যাঁর আমলে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে চুক্তি হয়েছিল। তাঁর বক্তৃতায় সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়ায় মনে হয়নি যে তাঁরা একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের কথা শুনছেন।
প্রকাশিত খসড়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন, প্রশমন, অর্থায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলোতে উঠে আসা মতামত তুলে ধরা হয়েছে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তার জন্য প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০ হাজার কোটি ডলার অর্থায়নের প্রশ্নে এখনো ঘাটতি থাকায় গভীর উদ্বেগের কথা রয়েছে। প্যারিস চুক্তির সব স্তম্ভের ক্ষেত্রে ঘাটতি পূরণে বিজ্ঞানের আলোকে আরও জোরালো আকাঙ্ক্ষা প্রয়োজন বলেও এতে উল্লেখ রয়েছে। মন্ত্রিপর্যায়ের দর-কষাকষিতে গতকাল মূল বিষয় ছিল অভিযোজন কর্মপরিকল্পনা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়।
ওবামা সম্মেলনের মূল অধিবেশনকক্ষে এক অনুষ্ঠানে দীর্ঘ বক্তৃতায় তরুণদের আন্দোলনের প্রশংসা করেন। যেসব তরুণ আন্দোলনে যুক্ত হতে পারছে না, তিনি তাদের ভোটের মাধ্যমে জলবায়ু বিষয়ে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মালি ও বাংলাদেশের মতো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে দূষণমুক্ত জ্বালানিতে উত্তরণের জন্য যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদেরই যেন বেশি মূল্য দিতে না হয়।’
এর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর এক পৃথক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ওবামা বলেন, ‘আমি একজন দ্বীপশিশু এবং দ্বীপগুলোই সবার আগে বিপদের আভাস পায়। আসন্ন সংকটের জন্য যাদের দায় কম, কিন্তু ঝুঁকি বেশি ও সামর্থ্য কম, তাদের সহায়তার জন্য ধনী দেশগুলোর অবশ্যই বাড়তি বোঝা নিতে হবে।’
এদিকে কপ ২৬-এর আলোচনায় স্বচ্ছতার ঘাটতির অভিযোগ তুলে পরিবেশবাদীসহ বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও এনজিও প্রতিনিধিরা বলছেন যে এবার দর-কষাকষির পর্বে তাঁদের প্রবেশাধিকার আগের সম্মেলনগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম। মানবাধিকার, নারী অধিকার, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, কার্বন-বাণিজ্য, জলবায়ু-সংকট মোকাবিলার অর্থায়ন ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ নিয়ে দর-কষাকষিতে নজরদারি এবং প্রয়োজনে মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকা জরুরি। কিন্তু প্রথম সপ্তাহের আলোচনায় তাঁরা প্রয়োজনীয় সুযোগ পাননি।
কপ ২৬-এ প্রান্তিক ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কথা বলার সুযোগ নেই দাবি করে দুই শতাধিক বেসরকারি সংগঠনের একটি জোট গ্লাসগোতেই গত রোববার শুরু করেছে পিপলস সামিট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। আগামীকাল পর্যন্ত এই জনগণের সম্মেলন চলবে।
অভিযোজন ও ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোটলি বলেছেন, জলবায়ু সংকটের সমস্যা বুঝতে যেখানে ভুল হচ্ছে, তা হলো ক্ষয়ক্ষতি পূরণে অর্থায়নের ব্যবস্থা বাদ দিয়ে কোনো ভালো সমাধান মিলবে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। ক্ষতিপূরণে অর্থ জোগানোর বিষয়টি বাদ দিতে ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠার পটভূমিতে বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ দূষণকারী দেশ চীন প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে গ্লাসগোতে যেসব অঙ্গীকার পাওয়া গেছে, তাতে চলতি শতকের শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা বলেছিল যে এসব প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় নিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৮ বা ১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। চীনা প্রতিনিধিদলের একজন উপদেষ্টা ওয়াং ই গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেছেন, চীনের সমালোচনা বিভ্রান্তিকর এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে চীন যত পদক্ষেপ নিয়েছে ও নিচ্ছে, ততটা কৃতিত্ব তাকে দেওয়া হচ্ছে না। জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার পূরণ না হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি অর্থ প্রয়োজন হবে।