পারমাণবিক সংঘাতের হুমকি সর্বদা বিদ্যমান থাকে। এমনকি যখন কেউ যুদ্ধ চায় না তখনো হুমকি থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে একটি দায়িত্বশীল নীতি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের এখনকার উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ রাশিয়ার স্পুতনিক নিউজকে এ কথা বলেছেন।
রাশিয়া ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মধ্যে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত বা যুদ্ধ সম্পর্কে একটি প্রশ্নের উত্তরে মেদভেদেভ বলেছেন, ‘কেউ কোনো যুদ্ধ চায় না, পারতপক্ষে পারমাণবিক যুদ্ধ, যা মানব সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই অর্থে, যেসব বিশ্লেষকেরা পারমাণবিক অস্ত্রের উদ্বেগ থাক সত্ত্বেও বলেছেন যে, এ ধরনের অস্ত্রের বিকাশ বিংশ এবং একবিংশ শতকে বিপুলসংখ্যক সংঘাত রোধ করেছে, তাঁরা সঠিক কথাই বলেছেন। এটাই প্রকৃত সত্য। আসলে এটা প্রকৃত অর্থেই সংঘাত রোধ করেছে।’
মেদভেদেভ বলেছেন, ‘সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, হুমকি সব সময় বিদ্যমান।’
রুশ নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান বলেন, রাশিয়ার বিভিন্ন স্থাপনাকে পারমাণবিক অস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে ন্যাটো। রাশিয়ার ওয়্যারহেডগুলোও ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাক করা। তাই একটি দায়িত্বশীল নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।
মেদভেদেভ উল্লেখ করেন, বর্তমান সংকট স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। কারণ সেই সময়ে রাশিয়ার প্রতিপক্ষরা পরিস্থিতি ঠিক করার চেষ্টা করেনি।
রাশিয়ান বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মেদভেদেভ বলেন, ‘বর্তমান সংকটের তুলনায় ১৯৯৮ সালের আর্থিক মন্দার সময়ে জাতি কম সুরক্ষিত ছিল। আপনি একই নদীতে দুবার পা রাখতে পারবেন না। একজন ফরাসি মন্ত্রী বলেছেন, এখন যা কিছু ঘটছে তা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঘোষিত অর্থনৈতিক যুদ্ধ মাত্র। তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং কোনো নিয়ম ছাড়াই যুদ্ধ চালানোর চেষ্টা করছে।’
মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেন, ‘নিয়মহীন এই অর্থনৈতিক যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করছে। এমনকি সম্পদগুলো বাজেয়াপ্ত করে তাদের জাতীয়করণের কথা বলছে। এটা নিয়ম ছাড়া যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধের ফলাফল কি? এর ফল হতে পারে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ধ্বংস করে ফেলা।’
মেদভেদেভ আরও বলেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো যে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়া তার পাল্টা জবাব দেবে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অবস্থায় রাশিয়া কারও ওপর নির্ভর করতে পারে না। তাই দেশের কর্তৃপক্ষকে নিজেরাই শিল্প এবং অন্যান্য ক্ষেত্র সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।’
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগ্রহী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির ১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিয়ে জি-২০ গঠিত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়াকে আর এ গ্রুপে রাখতে চাইছে না যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো। এ প্রসঙ্গে রুশ নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান বলেন, রাশিয়াকে জি-২০ থেকে বাদ দেওয়া যাবে না কারণ এটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছিল।
মেদভেদেভ বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা জি-২০ তৈরি করি। এখন তারা বলে, চলো রাশিয়াকে এখান থেকে ছেঁটে ফেলি! আমি স্মরণ করি, কীভাবে আমার চোখের সামনে এটি জন্ম নিল। সিদ্ধান্তগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে বুশ (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ) এতে অংশ নিল, এরপর ওবামা (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা)। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারতসহ একই টেবিলের চারপাশে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বসে থাকতে পেরে সকলেই খুশি হয়েছিল। এটা সর্বসম্মত ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল। এখন তারা বলছে, চলো রাশিয়াকে বাদ দিই। এটা তারা করতে পারে না।’
শিল্পোন্নত সাত শীর্ষ দেশের জোট জি-৭ নিয়ে মেদভেদেভ বলেন, রাশিয়ার অংশগ্রহণ স্থগিত করার পর জি-৭ এর আর কোনো গুরুত্ব নেই। তবে ২০০৮ সালে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য জি-২০ এর বিষয়টি আলাদা।