বন্য প্রাণীদের নিয়ে কাজ করলেও ইতালির স্ক্যাননো শহরের বাসিন্দা ইনিও সিকত্তি এমন দৃশ্য খুব কমই দেখেছেন। চারটি নেকড়ে তাড়া করেছে এক দল লাল হরিণকে। একদম সিকোত্তির বাড়ির সামনের রাস্তায়। নেকড়েগুলো দৌড়ে চলেছে, প্রাণভয়ে ছুটছে হরিণগুলোও। হরিণগুলো রাস্তা পেরিয়ে দোকানের পাশ কাটিয়ে ছুটে চলেছে। অবশেষে একটি উঁচু বেড়া পার হওয়ার সময় একটা হরিণ ধরে ফেলে নেকড়েগুলো। এরপরে কী হলো, তা না বললেও চলে।
ওয়ার্ল্ডলাইফ আলোকচিত্রীরা এমন একটি ছবি তোলার জন্য দিনের পর দিন বনে কাটিয়ে থাকেন। এখন কোভিডের কারণে নির্জন ইউরোপের শহরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে মানুষের। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
৯ মার্চ লকডাউন জারি হয় ইতালিতে। এই লকডাউনের মধ্যে অনন্ত তিনবার এই হরিণ ও নেকড়ের দৌড় দেখেছেন সিকোত্তি। সিকোত্তি বলেন, ‘তারা স্রেফ খেতে চায়। যানবাহন বাধা না হয়ে দাঁড়ালে, মানুষের আচরণ কোনো সমস্যা না করলে, তাদের যা করার তা–ই করে যায়।’
কেবল ইতালি নয়, এমন ঘটনা ইউরোপের অনেক শহরেই এখন দেখা যাচ্ছে। ইউরোপজুড়ে চলা লকডাউন মানুষকে বাধ্য করেছে ঘরে থাকতে। আর নানা জায়গায় ঘোরার সুযোগ পেয়ে গেছে বন্য প্রাণীরা। নগরে এসেও ঘুরে যাচ্ছে তারা।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করে। এতে দেখা যায়, পার্কের স্কুকুজা রেস্ট ক্যাম্পে একটি গলফ কোর্সে সিংহ আর হায়েনা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের তোলা একটি ছবি বেশ সাড়া ফেলে। এতে দেখা যায়, অঙ্গরাজ্যটির একটি ফাঁকা সৈকতে একটি নেকড়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে প্যারিসের একটি কবরস্থানে বাচ্চা–কাচ্চাসহ বাসা বানিয়েছে এক শিয়াল পরিবার। ওই কবরস্থানে অস্কার ওয়াইল্ড, জিম মরিসন এবং এডিথ পিয়াফের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের সমাধি রয়েছে। প্যারিস অ্যানিমাক্স জুপোলিসের প্রেসিডেন্ট অ্যামান্ডিন স্যানভিসেস বলেন, দুই মাস ধরে এই প্রাণীরা কোনো মানুষ দেখেনি। দর্শনার্থীদের জন্য সমাধিস্থল পুনরায় খুলে দিলে প্রাণীগুলো আবার আগের আচরণ করতে পারে।
জীববিজ্ঞানীরা এখনো অনিশ্চিত যে মানুষ ঘরে আটকে যাওয়ায় পশুর আচরণে উল্লেখ করার মতো পরিবর্তন এসেছে কি না। এটি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। উপসংহারে পৌছাতে কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। তবে লকডাউনের সময় বন্য প্রাণীদের এই আচরণ তাদের অবাক করছে না। ইনস্টিটিউট অব অ্যানিমেল বিহেভিওর ইন সাউদার্ন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত অনেক ছবি দেখেছি ও গল্প শুনেছি। এগুলো খুবই অন্য রকম। অবশ্য কিছু কিছু ফটোশপের কাজও হতে পারে।
মানুষ শহরে কেন এত বন্য প্রাণীর দেখা পাচ্ছে, এর কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটির গবেষক লিয়ানা জ্যানেটের মতে, বিশেষত বড় শিকারি প্রাণীগুলোর জন্য, মানুষের এই লকডাউন সম্ভবত আশীর্বাদ হয়েছে। জ্যানেট প্রাণীর আচরণের ওপর ভয়ের প্রভাব এবং কীভাবে শিকারী-শিকারের সম্পর্ক পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, তা পর্যালোচনা করছেন। তিনি মনে করেন যে কোভিডের বন্দিদশা বিভিন্ন প্রাণীকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করেছে। কিছু শিকারি প্রাণী নতুন অঞ্চলে শিকার শিকার করার সুযোগ নিয়েছে। কিছু প্রাণী হয়তো এমন করছে না। করোনা চলে গেলে আগের অবস্থা আবার দ্রুত ফিরে আসবে।