বিশ্বজুড়ে অমিক্রন–আতঙ্ক চলার মধ্যেই সম্প্রতি ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে করোনাভাইরাসের নতুন আরেকটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন এ ধরনে আক্রান্ত ১২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মেদিতেহানি ইনফেকশন ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ইনস্টিটিউটের (আইএইচইউ) গবেষকেরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের এ ধরন হলো বি.১.৬৪০.২। এটি আইএইচইউ নামেও পরিচিত হচ্ছে। ধরনটির উৎপত্তি ফ্রান্সে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, যাঁদের শরীরে এ ধরন শনাক্ত হয়েছে, তাঁরা আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনে গিয়েছিলেন বা দেশটিতে গিয়েছিলেন—এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। আইএইচইউর গবেষকেরা বলেছেন, তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক অপ্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের পাণ্ডুলিপি প্রকাশের একটি মাধ্যম হলো মেডরেক্সিভ। গত ২৯ ডিসেম্বর এ ওয়েবসাইটে আইএইচইউর গবেষকদের করা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
ভারতের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, গবেষকেরা বলেছেন, ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে শনাক্ত এই ধরনের রূপান্তর ঘটেছে ৪৬ বার। তাঁরা বলছেন, ধরনটির আচরণ সম্পর্কে বলার সময় এখনো আসেনি। এ ছাড়া ধরনটি অন্য কোনো দেশে ছড়িয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
গবেষকেরা বলেছেন, গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় প্রাপ্তবয়স্ক এক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় প্রথম আইএইচইউ ধরন শনাক্ত হয়। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অমিক্রন শনাক্ত হওয়ারও আগের ঘটনা এটি। কারণ, অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে গত ২৪ নভেম্বর।
ফ্রান্সে যে ব্যক্তির শরীরে প্রথম আইএইচইউ শনাক্ত হয়েছে, তিনি আক্রান্ত হওয়ার কয়েক দিন আগে ক্যামেরুন ভ্রমণ করে দেশে ফিরছিলেন। এরপর দক্ষিণাঞ্চলীয় ফ্রান্সে আরও ১১ জনের শরীরে আইএইচইউ শনাক্ত হয়।
এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে মাত্র ১২ জনের আইএইচইউ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। অন্য কোনো দেশে নতুন এ ধরনে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হননি। করোনাভাইরাসের আগের ধরনগুলোর তুলনায় এটি বেশি শক্তিশালী কি না কিংবা দ্রুত ছড়ায় কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এখন পর্যন্ত আইএইচইউকে ‘উদ্বেগের ধরন’ বলে উল্লেখ করেনি।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজ ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএইচইউ ধরনটির দিকে নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার কোভিড ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কর্মকর্তা আবদি মাহামুদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আইএইচইউ যে দ্রুতগতিতে ছড়ায়নি, সেটা ইতিবাচক লক্ষণ। এর বিস্তারের যথেষ্ট সুযোগ ছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি দেখা যায় এটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে, তবেই কেবল আইএইচইউকে ‘উদ্বেগের ধরন’ ঘোষণা করা হবে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত আইএইচইউ ধরন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের ভাইরোলজিস্ট টম পিকক বলেন, বি.১.৬৪০.২ ধরনটি নিয়ে এ মুহূর্তে উদ্বিগ্ন হওয়ার হওয়ার কিছু নেই। করোনার এ ধরন বেশ ভালো রকমের জটিলতা তৈরি করতে পারত; তবে তেমনটা ঘটেনি।
রোগতত্ত্ববিদ এরিক ফিগেল ডিং এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, নতুন নতুন ধরন শনাক্ত হতেই থাকবে। তার মানে এই নয় যে এগুলো অনেক বেশি বিপজ্জনক হবে। তিনি মনে করেন, অনেক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সংক্রমণের ক্ষমতা কতটা বাড়ছে, তার ওপরই নির্ভর করে ধরনটি কতটা বিপজ্জনক হবে। ডিং বলেন, অমিক্রন অনেক বেশি সংক্রামক এবং তা মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে; এখন নতুন ধরনটি এমন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।