বায়ুদূষণ রোধে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলছে। ব্যতিক্রম নয় পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশের বাসিন্দারাও। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাজধানীর তালিকায় এই শহর বায়ুদূষণে অন্যতম। এই পরিস্থিতিতে ওয়ারশের বাসিন্দাদের নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিতে বিচিত্র এক আয়োজন করা হয়েছে। শহরের কেন্দ্রে বসানো হয়েছে বিশেষ এক খেলার মাঠ। রয়েছে এয়ারবাবল ও বিশুদ্ধ অক্সিজেনের সরবরাহ। সেখানে গিয়ে শিশুরা খেলাধুলা করে। বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেয়।
নগরের নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ইকোলজিকস্টুডিও। এই প্রতিষ্ঠান ওয়ারশের এয়ারবাবল বানিয়েছে। রাজধানীর কোপারনিকাস সায়েন্স সেন্টারের প্রাঙ্গণে নদীর তীরে বানানো হয়েছে এটি। গোলাকার এই এয়ারবাবলের বাইরের আবরণ বানাতে ব্যবহার করা হয়েছে কাচের সিলিন্ডার। এর নিচের অংশ থেকে পাম্পের সাহায্যে বাতাস সরবরাহ করা হয়। এতে থাকা সবুজ জীবাশ্ম বাতাস থেকে দূষিত কণা ও কার্বন ডাই–অক্সাইড শুষে নিয়ে তা বিশুদ্ধ করে দেয়।
কাচের তৈরি এই এয়ারবাবল নিয়ে স্থানীয় লোকজন বেশ আগ্রহী। তাঁদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে একজন কর্মী দর্শনার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক সেখানে হাজির থাকেন। যাতে কেউ আহত না হন, সেটাও নিশ্চিত করেন তিনি। এ বিষয়ে ইকোলজিকস্টুডিওর সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্কো পোলেত্তো বলেন, শহরের ভবনগুলো এমনভাবে বানাতে হবে, যাতে এগুলো নিজে থেকেই জ্বালানি উৎপাদন, কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ ও বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করতে পারে।
সেখানে শিশুদের খেলার জন্য রয়েছে নানা উপকরণ। মায়ের সঙ্গে সেখানে খেলতে আসা আট বছরের আনিয়া বলেছে, এখানে লাফালাফি করাটা ভীষণ মজার। আনিয়ার মা মালগোরজাতা ওরোনা বলেন, ওয়ারশের মতো বড় শহরে এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিই সুন্দর। চারপাশে দূষণ, ধোঁয়াশা। এর মধ্যে এখানে এলে শিশুরা নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পায়।
আপাতত আগামী নভেম্বর পর্যন্ত ওয়ারশের শিশুদের জন্য এই এয়ারবাবল চালু থাকবে। তবে এটি স্থায়ীভাবে চালু রাখার চিন্তাভাবনা চলছে। এমনকি দেশটির অন্য শহরগুলোয়ও এই ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি (ইইএ) গত মাসে এই মহাদেশের বায়ুদূষণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে বায়ুর মানের বিবেচনায় ইউরোপের ৩২৩টি শহরের মধ্যে ওয়ারশের অবস্থান ছিল ২৬৯তম। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কয়লা পোড়ানোর কারণে (বিশেষত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলোয়) পোল্যান্ডের বায়ু সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়। বায়ুদূষণ ও এর জেরে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যায় দেশটিতে প্রতিবছর ৫০ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হয়।