ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের সফর

এবার তুরস্কের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা ইসরায়েলের

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ
ছবি : রয়টার্স

ইসরায়েল ও তুরস্কের সম্পর্কে এক দশকের বেশি সময় ধরে টানাপোড়েন চলেছে। অবশেষে গলতে শুরু করেছে সেই সম্পর্কের বরফ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আমন্ত্রণে আঙ্কারা সফরে গেছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ। আজ বুধবার তিনি আঙ্কারা পৌঁছেছেন। ২০০৮ সালের পর ইসরায়েলের কোনো শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার এটাই প্রথম তুরস্ক সফর। দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়তে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের এই সফর বলে আশা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আঙ্কারা-তেল আবিব সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার পর সেই সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। তখন থেকেই ইসরায়েলকে সরাসরি তীব্র সমালোচনা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। গত বছরে তুর্কি প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের ছবি তোলার সময় ইসরায়েলের এক দম্পতি আটক হন। পরে তাঁদের মুক্তির জন্য এরদোয়ানকে ফোন করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত। ২০১৩ সালের পর দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্বের মধ্যে এটাই ছিল প্রথম আলোচনা। ওই দম্পতিকে ছেড়ে দেয় তুরস্ক। এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে।

গত মাস থেকে দুই দশের সম্পর্কে উন্নতির বিষয়টি চোখে পড়ে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ওই সময় বলেন, ইসরায়েলের প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরোপে সরবরাহের জন্য তুরস্ক ও ইসরায়েল একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এ ছাড়া মার্চ মাসে দুই দেশ আলোচনা করে বিদ্যুৎক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করতে পারে।
হেরজগের সফরের আগে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটবে না তুরস্ক।

তুরস্ক ও ইসরায়েল—উভয় পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, দুই দেশের প্রেসিডেন্ট তাঁদের আলোচনায় সহযোগিতা জোরদার ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামতের বিষয়গুলো তুলবেন।

এর আগে ১৯৯৬ সালে ইসরায়েল ও তুরস্ক কৌশলগত সহযোগিতা বিষয়ে চুক্তি করেছিল। ওই চুক্তির আওতায় দুই দেশের বিমানবাহিনী পরস্পরকে প্রশিক্ষণ দিতে পারত। এরপর দুই দেশের মধ্যে আরও অস্ত্র সহযোগিতার চুক্তি হয়েছিল। এ নিয়ে তখন ইরানসহ আরব বিশ্বের দেশগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছিল তুরস্ক। তবে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলার কারণে দেশ দুটির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

২০১০ সালে গাজা অভিমুখে তুরস্কের ত্রাণবাহী একটি জাহাজে ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় তুরস্কের ১০ জন নাগরিক নিহত হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছায়। ২০১৩ সালের মার্চে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চাপের মুখে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তুরস্কের কাছে ক্ষমা চান এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও ক্ষমা করে দেন।

গত বছরের নভেম্বরে এরদোয়ান ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হেরজগ ও প্রধানমন্ত্রী বেনেতকে ফোন করেন। তুরস্ক হয়ে গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। এখন সে সম্পর্ক আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে হেরজগ তুরস্ক সফর করছেন।