এবার অত্যাধুনিক মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা পাচ্ছে ইউক্রেন

ইউক্রেনীয় এক সেনার কাঁধে একটি জ্যাভেলিন অস্ত্র
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রুশ হামলা শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অর্থ ও অস্ত্রসহায়তা দিয়ে আসছে। এবার ইউক্রেনকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা, রাডারসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম দেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। নতুন করে এ সহায়তা চলমান যুদ্ধের গতি বদলাতে ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে সহায়ক হবে বলে মত বিশ্লেষকদের। খবর আল-জাজিরার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনকে দুটি এনএএসএএমএস ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা, ৪টি রাডার ও ১৫৫ মিলিমিটারের দেড় লাখ রাউন্ড গোলা দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে অর্থ ও অস্ত্রসহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এর আওতায় এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮২ কোটি ডলার।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকে ইউক্রেনকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সামরিক সহায়তা নিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক ও ইউরোপের দেশগুলো।

তুরস্ক দেশটিকে অত্যাধুনিক ড্রোন দিয়েছে। যুক্তরাজ্য নতুন করে ৫০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কানাডা ২০ কোটি ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্স, স্পেন, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়াসহ অনেক দেশ সহায়তা নিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে।

নতুন করে সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে গত সপ্তাহে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনের যত দিন ও যা যা সহায়তা প্রয়োজন হবে, আমরা তা সরবরাহ করে যাব। রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে ইউক্রেনের সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করে যাবে। যদিও আমি জানি না এর (চলমান যুদ্ধের) শেষ কোথায়?’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। গতকাল রাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ইউক্রেনকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দেওয়া বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও জোরদার করবে।’

নতুন করে ঘোষণা দেওয়া সহায়তার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে ইউক্রেনে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দনবাসে ইউক্রেনীয় সেনাদের পাঁচটি সেনাচৌকি ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খারকিভে একটি ট্রাক্টর কারখানায় দেশটির সেনাদের অস্ত্র ও সরঞ্জামের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

রুশ সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমোভ ইউক্রেনে রুশ সেনা একটি ঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। এ-সংক্রান্ত একটি ছবিতে দেখা যায়, তিনি রুশ সেনাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তবে কবে নাগাদ তিনি ইউক্রেনে গিয়েছিলেন, তা জানানো হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। বিশেষত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এ পরিস্থিতিকে ‘ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি’ হিসেবে তুলনা করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগ তুলেছেন জেলেনস্কি। তাঁর মতে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে বেসামরিক অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন, হচ্ছেন। ধ্বংস হয়েছে অনেক বেসামরিক স্থাপনা। এটা স্পষ্টতই রুশ বাহিনীর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ।