ফোনে আড়ি পাতার কাজে ব্যবহৃত ইসরায়েলের গোপন নজরদারি সফটওয়্যার পেগাসাস ফ্রান্সের অন্তত পাঁচজন মন্ত্রীর মুঠোফোনেও পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সূত্র ও একটি গোপন গোয়েন্দা নথির বরাতে অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্ট এসব তথ্য জানিয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানের খবর।
ইসরায়েলের সাবেক সাইবার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হাত ধরে ২০১০ সালে গড়ে উঠে তেল আবিবভিত্তিক এনএসও গ্রুপ। তাঁদের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ওয়্যারসহ ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি একযোগে এ খবর প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন কর্তৃত্ববাদী দেশের সেনাবাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা এনএসও গ্রুপের গ্রাহক। বিভিন্ন ব্যক্তির ফোনে আড়ি পেতে তাঁদের সংগৃহীত তথ্য ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হাতিয়ে নেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
পেগাসাস প্রজেক্ট নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ফরাসি মন্ত্রীর ফোনে ওই সফটওয়্যার থাকার এ খবর প্রকাশিত হলো। তবে মন্ত্রীদের মুঠোফোনগুলো হ্যাক করা হয়েছে, এর পক্ষে কোনো শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এনএসও গ্রুপের দাবি, গুরুতর অপরাধ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের বাইরে পেগাসাস সফটওয়্যারকে কাজে লাগানোকে তারা এর অপব্যবহার হিসেবে বিবেচনা করে। চুক্তিতেও এর উল্লেখ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও দাবি করেছে, কোনো ধরনের অপব্যবহার ধরতে পারলে তারা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য মানবাধিকার রক্ষা। যার মধ্যে রয়েছে মানুষের জীবনযাপনের অধিকার, নিরাপত্তা, ব্যক্তির চলাচলের স্বাধীনতা।
এনএসও গ্রুপের একজন মুখপাত্র বলেন, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এই সফটওয়্যারের কল্যাণে রাতে ভালোমতো ঘুমাচ্ছে ও রাস্তায় নিরাপদে চলাচল করছে।
এ জন্য পেগাসাস ও এ ধরনের প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ। কারণ, সেগুলো বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ ও শিশু যৌন নিপীড়ক চক্রকে প্রতিরোধ ও তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে সাহায্য করছে। এসব চক্র এনক্রিপটেড অ্যাপগুলোর ছায়ায় থেকে গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে এনএসও বলেছে, ‘ফরাসি কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা আমাদের ইতিপূর্বে দেওয়া বক্তব্যে অটল রয়েছি। তাঁরা পেগাসাসের লক্ষ্যবস্তুতে নেই ও কখনো ছিলেন না। আমরা অজানা সূত্রের বরাতে প্রকাশিত খবর নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
এদিকে মিডিয়াপার্ট বলেছে, পেগাসাস ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ফ্রান্সের শিক্ষা, আঞ্চলিক সংহতি, কৃষি, আবাসন ও বহির্বিশ্ববিষয়ক মন্ত্রীদের মুঠোফোনে। ২০১৯ সালে তাঁদের ফোনে স্পাইওয়্যারটি দিয়ে নজরদারি শুরু করা হয়। তবে সেই সময় তাঁরা সবাই বর্তমান পোস্টে ছিলেন না। এলিসি প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর কূটনৈতিক উপদেষ্টাদের একজন সফটওয়্যারটির নিশানা হন বলে জানিয়েছে মিডিয়াপার্ট।
পেগাসাস কেলেঙ্কারি নিয়ে এলিসি প্রাসাদের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।