করোনা নিয়ে ডব্লিউএইচও

ইউরোপে সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ

জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন এক কর্মী। করোনা মহামারিতে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতালি।
ছবি: রয়টার্স

ইউরোপে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে করোনায় মৃত মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, ইউরোপজুড়ে এখন মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে এ মহামারি। এই সতর্কবাণী এমন এক সময় এল, যখন ইউরোপের কয়েকটি দেশে লকডাউনের মতো করোনাকালীন বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ চলছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান-এর।

ইউরোপে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ বলেছেন, এ মহাদেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা খুবই চিন্তিত।

ডব্লিউএইচও বলেছে, করোনায় ইউরোপে বর্তমানে দৈনিক মৃত মানুষের সংখ্যা ৪ হাজার ২০০ দাঁড়িয়েছে, যা গত সেপ্টেম্বরে দৈনিক মৃত্যুর প্রায় দ্বিগুণ। অপরদিকে যুক্তরাজ্যসহ গোটা ইউরোপে মোট মৃত্যু ইতিমধ্যে ১৫ লাখ ছাড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত ভয়াবহ’ উল্লেখ করে ডব্লিউএইচও বলেছে, ইউরোপের ৫৩টি দেশের মধ্যে ২৫টি দেশেই করোনা পরিস্থিতি ‘অতিমাত্রায় উদ্বেগজনক’। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে আগামী বছরের মার্চের শুরুতে এ মহাদেশে মোট মৃতের সংখ্যা ২২ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ইউরোপে বর্তমানে যে হারে মানুষ মরছে, তা চলতে থাকলে ১ মার্চ নাগাদ আরও ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
বিশ্বে করোনার তথ্য সার্বক্ষণিক হালনাগাদ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপে করোনায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী যুক্তরাজ্য।

সেখানে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৯৯ লাখ ৩২ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৩৭ জন। এরপর রয়েছে ফ্রান্স।

দেশটিতে ৭৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোকের করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৩ জন।

ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত ২৫ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার ৮২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৫১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৯৬ জন।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর একবার এ মহামারির কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল ইউরোপ।

এবার এ অঞ্চল আবার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপের অনেক দেশের যেসব নাগরিক টিকা নেননি, তাঁদের ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। এমনকি কিছু দেশে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করায় এটি বিতর্কও উসকে দিচ্ছে।

ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তা হ্যান্স ক্লুগ বলেন, সংক্রমণ যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্য টিকাদান ছাড়াও অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ করা দেশগুলোর জন্য খুব জরুরি ছিল। স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এখন পর্যন্ত ইউরোপে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মোট জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ টিকা পেয়েছেন। তবে টিকাদানের হারে দেশগুলোর মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। যেমন কোনো দেশে জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ লোক টিকা পেয়েছেন, আবার কোনো দেশে ৮০ শতাংশের বেশি পেয়েছেন।

জার্মানিতে করোনায় মৃত্যু লাখ ছাড়াল

প্রতিনিধি, হ্যানোভার জানান, জার্মানিতে সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে এ মহামারিতে মৃত্যু লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০০ জনের। সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫৪ হাজার ১২৮ জনের। ইউরোপের দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২৬।

এদিকে বিবিসি জানায়, পোল্যান্ড সতর্ক করেছে, সংক্রমণের হার না কমলে বিধিনিষেধ আবার চালু করা হতে পারে। দেশটিতে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৮ হাজার ৩৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।