‘একজন বিজ্ঞ লোক যিনি কম কথা বলেন, খুবই বিজ্ঞ লোক বটে… তিনি আমাকে বলেন, ন্যাটো যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। আমি বললাম কেন? জবাবে তিনি বললেন, তারা (ন্যাটো) রাশিয়াকে বারবার উত্ত্যক্ত করছে। তারা বুঝতে পারছে না রুশরা সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার, তারা কোনো বিদেশি শক্তিকে কাছে ঘেঁষতে দেবে না’
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস এক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে তিনি ওই রাষ্ট্রপ্রধানের নাম প্রকাশ করেননি। দুজনের মধ্যে হওয়া কথাগুলো এক সাক্ষাৎকারে ইতালির রোম থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘লা সিভিলতা ক্যাতলিকাকে’ এভাবেই বলছিলেন পোপ।
১৪ জুন প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকারে ক্যাথলিক সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আরও বলেন, ‘এ যুদ্ধ শুরুর নেপথ্যের পুরো নাটকীয়তা আমরা দেখতে পাই না। সম্ভবত, এ যুদ্ধে হয় প্ররোচিত করা হয়েছে কিংবা যুদ্ধটা ঠেকানো হয়নি।’
কিন্তু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও তাদের নেতাদের বক্তব্য দেখলে মনে হবে, খায়েশের বশে ইউক্রেন হামলা করে বসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় এ যুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ কেবল রাশিয়া আর ইউক্রেন।
কেউ হয়তো জানে না রাশিয়া ইতিমধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ও মানুষ ধারণা করতে পারেনি কখন পুরো মাত্রায় যুদ্ধটা শুরু হবেইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
‘মিডনাইট ইন দ্য আমেরিকান এমপায়ার, হাউ করপোরেশনস অ্যান্ড দেয়ার পলিটিক্যাল সার্ভেন্টস আর ডেস্ট্রয়িং দ্য আমেরিকান ড্রিম’ বইয়ের মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক রবার্ট ব্রিজ। তিনি বলেছেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম এমনভাবে তথ্য দিচ্ছে যাতে মনে হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ পুতিনের মনে হয়েছে, ‘দিনটা সুন্দর, ইউক্রেনে হামলা চালানো যাক।’ কিন্তু ঘটনাটা এমন নয়। এ কথা কেউ বলতে পারবে না, মস্কো আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানায়নি।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে যে একপ্রকার টেনে আনা হয়েছে, পোপ ও ব্রিজের লেখা থেকে সহজেই অনুমেয়। আর সেটা আরও স্পষ্ট হয়েছে যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা যেভাবে ইউক্রেনের হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ঝাঁপিয়ে পড়েছে—মিডিয়া প্রোপাগান্ডা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক অবরোধ আর অস্ত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে ভাড়াটে সেনা প্রেরণ।
বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জোট ন্যাটো। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা সমাজতন্ত্র মোকাবিলার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ জোট। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৯৫৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় পাল্টা সামরিক জোট ‘ওয়ারশ প্যাক্ট’। ১৯৯০ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে এ জোটও লুপ্ত হয়। সে সময় বিদায়ী সোভিয়েত নেতাদের সঙ্গে মার্কিন নেতাদের এ রকম বোঝাপড়া হয় যে ন্যাটো আর সম্প্রসারিত হবে না।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তথা ন্যাটো সে কথা রাখেনি। এ জোটের সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে। ওয়ারশ জোটে যুক্ত সব কটি দেশই এখন ন্যাটোতে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক প্রজাতন্ত্রও এখন ন্যাটোর সদস্য। মানচিত্র দেখলে দেখা যাবে, ইউক্রেন আর বেলারুশ বাদে রাশিয়া সীমান্তের প্রায় সব কটি দেশই ন্যাটোতে যোগদান করেছে। রাশিয়া ন্যাটো দ্বারা ঘেরাও হয়ে পড়ার পথে।
এ নিয়ে ২০০৭ সালে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা বিশ্বের নেতাদের প্রশ্ন ছুড়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের সীমান্তে সামরিক অবকাঠামো বাড়ানো কেন প্রয়োজন? কেউ কি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন?’
রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তে ইউক্রেন অথবা অন্য কোনো দেশে সামরিক সম্প্রসারণ বন্ধের দাবি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে চুক্তির খসড়া পাঠায় মস্কো। এতে বলা হয়, ন্যাটো ইউক্রেন, পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ ককেশাস ও মধ্য এশিয়ার কোনো দেশে সামরিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না। তবে পশ্চিমা নেতারা রাশিয়ার এসব প্রস্তাবে কর্ণপাত করেননি।
ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মস্কোর হুঁশিয়ারিকে পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত মস্কোর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। আর তারই পরিণতি ইউক্রেনে রুশ হামলা। পরে জেলেনস্কি সুর নরম করলেও হয়তো পিছু হটার সুযোগ ছিল না পুতিনের।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় ছিল পশ্চিমারা। তবে কিছু সময় পর তারা ইউক্রেনের হয়ে একযোগে মাঠে নামে। নিজেদের অস্ত্রাগার ইউক্রেনের জন্য অবারিত করে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থা করে সেনা প্রশিক্ষণের। অত্যাধুনিক সব অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে ইউক্রেনকে। মধ্যপাল্লার রকেট সিস্টেম থেকে শুরু করে ট্যাংক–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। হাউইৎজার থেকে শুরু করে সশস্ত্র ড্রোন। দেওয়া হয়েছে বিমান ও জাহাজ–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। আর এসব অস্ত্র চালনায় পোল্যান্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ন্যাটো।
যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেনে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সামরিক হেলিকপ্টার, ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্র সরবরাহ করছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো মিত্ররা। এমনকি সংঘাতপূর্ণ এলাকায় অস্ত্র না পাঠানোর দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে এসে ইউক্রেনকে ট্যাংক ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করছে জার্মানির মতো দেশ।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে কেবল অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেই ক্ষান্ত হয়নি পশ্চিমারা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সেনা না পাঠালেও তাদের অনেক সেনা ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে’ ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। গত ১৫ মে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গিয়ে স্টিফেন জাবিয়েলস্কি (৫২) নামের এক মার্কিন নাগরিক নিহত হন। এ ছাড়া আলেক্সান্ডার ড্রুক ও অ্যান্ডি হুয়েন নামের দুই মার্কিন এখন রুশ বাহিনীর হাতে বন্দী। তাঁরা দুজনই সাবেক মার্কিন সেনা।
জর্ডান গেটলি নামের সাবেক এক ব্রিটিশ সেনাও সম্প্রতি ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে অংশ নেওয়ার অভিযোগে দুই ব্রিটিশ ও এক মরক্কোর নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্কের একটি আদালত। এর আগে এই তিনজন যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন।
১৭ জুন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেঙ্কভ এক বিবৃতিতে দাবি করেন, ইউক্রেনে চলমান সংঘাতে ৬৪টি দেশ থেকে আসা ভাড়াটে যোদ্ধা ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা যুক্ত হয়েছেন। উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে ভাড়াটে যোদ্ধা প্রেরণে দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র। সবচেয়ে বেশি ভাড়াটে যোদ্ধা পোল্যান্ডের। অবশ্য ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে সিরিয়া ও আফ্রিকার একাধিক দেশের যোদ্ধারাও লড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো ইউক্রেন ও রাশিয়ার ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এর অর্থনৈতিক প্রভাব গোটা বিশ্বেই পড়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুটি খাদ্যশস্য সরবরাহকারী দেশ। যুদ্ধ ও রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক বেড়ে গেছে। এর সার্বিক প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের ওপর। এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও খাদ্যসংকটের প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কেবল দরিদ্র দেশগুলোই নয়, এ যুদ্ধে উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। সিএনবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১০৭ শতাংশ। কেবল শেষ এক মাসেই বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। দেশটিতে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরের পর মে মাসে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৬–এ গিয়ে ঠেকেছে।
মন্দার আশঙ্কার মধ্যে যুক্তরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) গত এপ্রিলে দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বড় প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। জার্মানিতে গত শরতের পর ইতিমধ্যে জ্বালানি খরচ ৩০-৮০ শতাংশ বেড়েছে। আগামী দিনগুলোতে সেটি দ্বিগুণ অথবা তিন গুণ হতে পারে বলেও ভোক্তাদের আগাম সতর্ক করছে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ইউক্রেন যুদ্ধকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই পক্ষের লোকজনই এই সংঘাতকে নিজেদের মতো করে যুক্তি দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলার চেষ্টা করছেন। মধ্য মার্চের দিকে এনবিসি নিউজে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কিকে বলতে শোনা যায়, কেউ হয়তো জানে না রাশিয়া ইতিমধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। তাঁর যুক্তি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ও মানুষ ধারণা করতে পারেনি কখন পুরো মাত্রায় যুদ্ধটা শুরু হবে।
ইউক্রেনে হামলাকে এখনো ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলছে মস্কো। অবশ্য ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহে ‘বৃহত্তর সংঘাতের’ হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন রুশ নেতারা। তবে এ যুদ্ধে ইউক্রেনের চেয়ে পশ্চিমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখাতে বেশি আগ্রহ রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোর। ইউক্রেনকে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ ও ভাড়াটে যোদ্ধা ধরা পড়ার ঘটনাগুলো ফলাও করে প্রচার করে সেটিই প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা।
রোশিয়া-১ চ্যানেলের উপস্থাপক ওলগা স্কাবায়েভাকে একটি ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এখন রাশিয়ার কাজ হলো শুধু ইউক্রেন নয়, পুরো ন্যাটোর ‘অসামরিকীকরণ’। তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শেষ হয়েছে—হয়তো এ কথা স্বীকার করার সময় এসেছে। পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ মানে এখন এটি বৈশ্বিক সংঘাত।
হয়তো বৈশিষ্ট্যগত কারণে ইউক্রেন যুদ্ধকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলার সুযোগ নেই। তবে বহু পক্ষের সম্পৃক্ততা এবং বিশ্বব্যাপী যে নেতিবাচক পরিস্থিতি এ যুদ্ধ তৈরি করেছে, সে বিবেচনায় চরিত্রগতভাবে এটাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলার প্রবণতা একেবারে অযৌক্তিক নয়।
রাশিয়ার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে ইউক্রেনের আকাশসীমায় নো–ফ্লাই জোন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। তবে এতে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত তথা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে আশঙ্কায় সাড়া দেয়নি ন্যাটো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়াবে না তাঁর দেশ। যদি রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়া জানানো হতো, তবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতো।
তবে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ ও সেনা প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসী নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধকে বৈশ্বিক সংঘাতে রূপ দিয়েছে পশ্চিমারা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়া, সরাসরি সৈন্য প্রেরণ থেকে বিরত থাকা, রাশিয়ার ‘একার লড়াই’ আর দুই দেশের ভূখণ্ডেই যুদ্ধক্ষেত্র সীমাবদ্ধ থাকায় হয়তো বৈশিষ্ট্যগত কারণে ইউক্রেন যুদ্ধকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলার সুযোগ নেই। তবে বহু পক্ষের সম্পৃক্ততা এবং বিশ্বব্যাপী যে নেতিবাচক পরিস্থিতি এ যুদ্ধ তৈরি করেছে, সে বিবেচনায় চরিত্রগতভাবে এটাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলার প্রবণতা একেবারে অযৌক্তিক নয়।