ইউক্রেন যুদ্ধের বিকল্প ছিল না বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধের সব ‘মহৎ’ লক্ষ্য অর্জিত হবে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মস্কোকে নতজানু করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও পশ্চিমাদের খোঁচা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। খবর আল-জাজিরার।
ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে সপ্তাহখানেক প্রকাশ্যে আসছিলেন না পুতিন। প্রথম মানব হিসেবে রুশ নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ ভ্রমণের ৬১ বছর পূর্তির দিনে গতকাল মঙ্গলবার ভস্তোচনি কসমোদ্রোম রকেট উৎক্ষেপণকেন্দ্রে জনসম্মুখে বক্তব্য দেন তিনি।
পুতিন বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কারণ, পূর্ব ইউক্রেনের রুশভাষী মানুষকে রক্ষা করতে হবে। সাবেক সোভিয়েত প্রতিবেশীকে মস্কোর শত্রুদের রুশবিরোধী মঞ্চে পরিণত হওয়া থেকে ঠেকাতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো, নির্ধারিত সব লক্ষ্য অর্জন, ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে রাখা। আমরা ধারাবাহিকতা মেনে, ধীরস্থিরভাবে মূলত (সামরিক বাহিনীর) জেনারেল স্টাফের দেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি।’
ইউক্রেনের অভিযানে লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে কি না, রুশ মহাকাশ সংস্থার কর্মীদের এমন প্রশ্নের উত্তরে পুতিন বলেন, ‘অবশ্যই। এ নিয়ে আমার কোনো ধরনের সংশয় নেই। এই অভিযানের লক্ষ্যগুলো একেবারেই স্পষ্ট এবং মহৎ। সব লক্ষ্যই যে অর্জিত হবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরুর পর রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমাদের একের পর এক নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যে ঝটিকা পদক্ষেপের ওপর আমাদের শত্রুরা ভরসা করছে, সেটা কাজ করছে না।’
ইউক্রেন ও রাশিয়াকে এক জাতি উল্লেখ করে পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনিবার্য সংঘাতের কারণে এ যুদ্ধ। তারা সীমান্তের কাছে এসে হস্তক্ষেপ করে রাশিয়াকে হুমকি দিচ্ছে।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে রুশ বাহিনীর প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হওয়া এবং কিয়েভসহ বড় শহরগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য হওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইউক্রেনের কিছু অঞ্চলে আমাদের সামরিক অভিযান ছিল কেবলই শত্রুদের অবরুদ্ধ করে রাখা, সামরিক স্থাপনা ধ্বংস এবং দনবাসে আরও সক্রিয় অভিযান চালানোর পরিবেশ তৈরির জন্য।’
কিয়েভের উপকণ্ঠে বুচা শহর থেকে রুশ বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বেসামরিক নাগরিকদের শত শত লাশ পাওয়ার বিষয়টিকে ‘ভুয়া’ বলেও নাকচ করে দেন পুতিন।
এ সময় পশ্চিমা অবরোধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ইচ্ছা নেই। আধুনিক এই যুগে কাউকে একঘরে করে ফেলা সম্ভব নয়, বিশেষ করে রাশিয়ার মতো বিশাল দেশকে।’
ইউক্রেনের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের পদক্ষেপকে নিজেদের জন্য হুমকি ঘোষণা দিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা শুরু করে রাশিয়া। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি রুশ বাহিনী। তবে মস্কো বলে আসছে, পরিকল্পনা অনুযায়ীই তাদের এই ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ অব্যাহত রয়েছে।