আহত শিক্ষক বললেন, ‘পুলিশকে কখনো ক্ষমা করব না’

রব এলিমেন্টারি স্কুলে হামলার ঘটনায় ১৯ শিক্ষার্থী ও ২ শিক্ষক নিহত হন
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে রব এলিমেন্টারি স্কুলে সম্প্রতি বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় আহত হন শিক্ষক আরনুলফো রেয়েস। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সেদিনের ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ সেদিন ব্যবস্থা নিতে দেরি করেছিল। পুলিশকে ‘ভীরু’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি তাঁদের কখনো ক্ষমা করবেন না। খবর বিবিসির।

গত ২৪ মে টেক্সাসের ইউভালডেতে রব এলিমেন্টারি স্কুলে হামলা চালায় এক বন্দুকধারী। এ ঘটনায় ২১ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ১৯ শিক্ষার্থী ও ২ জন শিক্ষক। এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন।

১৭ বছর ধরে রব এলিমেন্টারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন রেয়েস। ২৪ মে হামলার সময় তিনি একটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ব্যস্ত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের একটি মুভি দেখাচ্ছিলেন তিনি। শিক্ষক রেয়েস বলেন, স্কুলে বন্দুকধারীর হামলা হয়েছে জানতে পেরে তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের টেবিলের নিচে লুকিয়ে থাকতে বলেছিলেন। মৃতের ভান করে থাকতে বলেছিলেন তাদের। তবে পাশের একটি শ্রেণিকক্ষ হয়ে বন্দুকধারী ওই শ্রেণিকক্ষে চলে আসেন এবং গুলি চালাতে থাকেন।

এ সময় রেয়েস গুলিবিদ্ধ হন। শিক্ষার্থীদের যেভাবে শিখিয়েছিলেন, সে রকম করে নিজেও মৃতের ভান করে শুয়ে থাকেন। নিজের ডেস্কের পাশে শুয়ে থাকা অবস্থায় তিনি পুলিশের উপস্থিতির শব্দ টের পাচ্ছিলেন। হামলা হওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় পুলিশ ঘটনাস্থলে প্রবেশ করেছিল।

তবে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ব্যবস্থা নিতে ও হামলাকারীকে হত্যা করতে এক ঘণ্টার বেশি সময় নিয়েছিল পুলিশ। এবিসি নিউজের গুড মর্নিং আমেরিকা অনুষ্ঠানে রেয়েস বলেন, ‘আমি বারবার প্রার্থনা করছিলাম যেন আমার কোনো শিক্ষার্থী কথা না বলে ফেলে। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন প্রাণে রক্ষা পাবেন না।

অন্য একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে এক শিক্ষার্থী বলে ওঠে, অফিসার আমরা এখানে, আমরা এখানে। তবে ততক্ষণে তারা (পুলিশ) চলে গেছে। এরপর সে (হত্যাকারী) আমার ডেস্কের পেছন থেকে উঠে দাঁড়ালো এবং সেখানে গিয়ে (পাশের কক্ষে) আবারও গুলি চালাতে শুরু করল।’

বিভিন্ন ধরনের সাংঘর্ষিক তথ্য আসতে থাকার পর পুলিশ এখন বলছে, বন্দুকধারী হামলা চালানোর ৭৭ মিনিট পর তাদের সদস্যরা ভেতরে ঢুকেছে। ব্যবস্থা নিতে দেরি করার কারণে ইউভালডে পুলিশ ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে আছে।

রেয়েস বলেন, ঘটনার সময় মনে হচ্ছিল, পুলিশ তাঁদের ফেলে রেখে চলে গেছে। পুলিশের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁরা যে কাজ করেছে, তার জন্য কোনো অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই। আমি কখনোই তাঁদের ক্ষমা করব না।’

রেয়েস বলেন, তিনি যে শ্রেণিকক্ষে ছিলেন, সেটি এবং পাশের শ্রেণিকক্ষ মিলিয়ে ১১ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। পুলিশের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের কাছে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ছিল। আমার কাছে কিছু ছিল না।’

হামলা চলার সময় শিক্ষার্থীরা মরিয়া হয়ে জরুরি সেবা নম্বরে (৯১১) ফোন দিয়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছিল তারা। উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ তাঁদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়।

তদন্তকারীরা বলছেন, ৯১১ নম্বরে শিশুদের কাছ থেকে আসা বার্তাগুলো ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের কাছে পৌঁছানো হয়নি। ঘটনাস্থলে অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যরা আরও বেশি সরঞ্জাম এসে পৌঁছানোর অপেক্ষায় ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের ধারণা ভুল ছিল। তারা ভেবেছিল, পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। সক্রিয় ওই বন্দুকধারী ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ব্যবস্থা নিতে নিজেদের প্রস্তুত করতে যথেষ্ট সময় আছে বলে ভেবেছিল তারা।