জেনেসিস মার্কেট। এটি একটি অনলাইন ‘মার্কেটপ্লেস’। তবে এই অনলাইন বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা সবাই মূলত অপরাধী। এখানকার বিক্রেতারা সাইবার হামলা চালিয়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেন। আর সেখান থেকে পাসওয়ার্ড, লগইন–সংক্রান্ত তথ্য, আইপি অ্যাড্রেসসহ অন্যান্য তথ্য কিনে নেন অনলাইন প্রতারকেরা। এসব তথ্য দিয়ে তাঁরা ভুক্তভোগীর নকল ‘ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ তৈরি করতে পারতেন। পরে তা ব্যবহার করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতেন।
অনেক সময় জেনেসিস মার্কেটে এক ডলারের কম দামে বিক্রি হওয়া তথ্য ব্যবহার করে প্রতারকেরা বিভিন্ন ব্যক্তির শপিং ও ব্যাংক হিসাব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। বিশ্বের ১৭টি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিত এক অভিযানে জেনেসিস মার্কেটের ওয়েবসাইট জব্দ এবং শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
অভিযান শুরু হয় গতকাল মঙ্গলবার ভোরে। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) এবং ডাচ ন্যাশনাল পুলিশ। এ ছাড়া অভিযানে অংশ নেয় যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ), অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২০০ জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জেনেসিস মার্কেটের ওয়েবসাইট এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। অনলাইন প্রতারকদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অনলাইন কুকি মনস্টার’। আজ বুধবার জেনেসিসের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, আগের কিছু নেই এবং সেখানে লেখা, ‘অনলাইন কুকি মনস্টার। এই ওয়েবসাইট জব্দ করা হয়েছে’।
জেনেসিস মার্কেটে বিক্রির জন্য আট কোটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ও ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছিল। যুক্তরাজ্যের এনসিএ বলছে, প্রতারণার জন্য এটি অবারিত সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে প্রতারকদের। এনসিএর ন্যাশনাল ইকোনমিক ক্রাইম সেন্টারের মহাপরিচালক রবার্ট জোনস বলেন, ‘বহু বছর ধরে জেনেসিস সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা এখন চাই, অপরাধীরাও যেন এবার ভয় পান যে এখন আমাদের কাছেও তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য–উপাত্ত রয়েছে।’
জেনেসিস মার্কেটের যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। এর সুনাম ছিল, এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। জেনেসিসের ওয়েবসাইটে ঢুকে এক জায়গা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির লগইন–সংক্রান্ত তথ্য কেনা যেত। ব্যক্তির অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড, কোথায় ব্রাউজ করেছেন সে তথ্য, কুকিজ, অটোফিল ডেটা, আইপি অ্যাড্রেস ও লোকেশনের তথ্য কেনা যেত। এসব তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার করে প্রতারকেরা ভুক্তভোগীর ই–মেইল, শপিং ও ব্যাংক হিসাব হাতিয়ে নিতে পারতেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধ করতেন তাঁরা।
জেনেসিসের ওয়েবসাইট জব্দ করার পর সেখানে একটি পোর্টাল চালু করেছে ডাচ পুলিশ। সেখানে যে কেউ জানতে পারবেন, তাঁর তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কি না।