তুরস্কে ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে দাতা দেশগুলোর কাছে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার (১০০ কোটি মার্কিন ডলার) তহবিল চেয়েছে জাতিসংঘ। এর আগে সিরিয়ার জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা চাওয়া হয়। জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তা প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস গত সপ্তাহে তুরস্ক সফর করেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার বলেন, ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের এই চরম দুঃসময়ে সবাইকে অবশ্যই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাঁরা যেন প্রয়োজনীয় সহায়তা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে তুরস্কে ইতিমধ্যে ৩৬ হাজার ১৮৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। সিরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার আট শতাধিক মানুষের। তুরস্কে এখনো উদ্ধার তৎপরতা চলছে। তবে এখন ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারের আশা ফিকে হয়ে এসেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ভূমিকম্পের ১১ দিন পর গতকাল ২ ব্যক্তি ও ১৪ বছরের এক কিশোরকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্কের উদ্ধারকারীরা আনতাকিয়া অঞ্চলে ভূমিকম্পের ২৬০ ঘণ্টা পর ওসমান নামের ওই কিশোরকে উদ্ধার করে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেতিন কোচা টুইটারে এ তথ্য জানান। স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা ওই কিশোরের ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন, তাকে হাতায়ার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে শব্দ শুনে উদ্ধারকারীরা ওসমানকে উদ্ধার করেন। এর এক ঘণ্টা পরই আনতাকিয়ায় ২৬ ও ৩৩ বছর বয়সী দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। তাঁরা হলেন, মেহমেহ আলী সাকিরোগলু ও মুস্তাফা আভচি। একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকেই তাঁদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়ার পর আভচি তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানতে চান, মা ও অন্যরা কেমন আছেন। সবাই ভালো আছেন জেনে তাঁর মুখে হাসি ফোটে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কাহরামানমারাস প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক তরুণীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। সাধারণত ভূমিকম্পের এত দিন পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনা খুবই কম দেখা যায়।
তুরস্কের এই ভূমিকম্পে লক্ষাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গৃহহারা হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। বরফশীতল তাপমাত্রায় আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির ১১টি প্রদেশে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আদানা, কিলিস ও সানলিউরফাতে উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে।
অনেক পরিবার এখনো তাদের স্বজনদের ফেরার আশায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে একই সঙ্গে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ভবন নির্মাণে দুর্নীতি এবং ত্রুটিপূর্ণ নগর উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ তাদের। তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডেভেলপারসহ ১০০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। সিরিয়ার সরকার বলছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ১১৪। দেশটির বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে নিহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি। উদ্ধারকারীরা বলছেন, ৯ ফেব্রুয়ারির পর সেখানে আর কাউকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সরকারী বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে এসব এলাকায় ত্রাণকার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষেরা নিজেদের ‘অবহেলিত’ মনে করছেন।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাতিসংঘের সহায়তার ১১৯টি ট্রাক পৌঁছেছে। এ ছাড়া কাতারের ১৫টি ট্রাক বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত আফরিন এলাকায় পৌঁছেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল জগন চাপাগাইন বলেন, সংকট দীর্ঘায়িত হবে। দুই দেশের জন্য সহায়তা তিন গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। বৈরুতে তিনি বলেন, ভূমিকম্পের প্রভাব তিন মাসেও শেষ হবে না। তারা ইতিমধ্যে দুই বছরের পরিকল্পনা করেছেন।
আরও ভূমিকম্পের আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, তুরস্কে আরও ভূমিকম্প হতে পারে। বিশেষ করে তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুলে এ ধরনের ভূমিকম্প ঘটলে আরও বেশি প্রাণহানি ঘটবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ আবার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।