বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১০ ভাস্কর্য কোনগুলো

ভাস্কর্যের মাধ্যমে বিখ্যাত ব্যক্তি থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ঘটনা কিংবা ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফুটিয়ে তোলা যায়। বিশ্বে অনেক ধরনের ভাস্কর্যই তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ভাস্কর্য উচ্চতায় অনেক বড়। বিশ্বে উঁচু ভাস্কর্যের স্বীকৃতি পাওয়া ভাস্কর্যগুলো আসলে কতটা উঁচু? এগুলোর অবস্থানই–বা কোথায়? বিবিসি সায়েন্স ফোকাস বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১০টি ভাস্কর্যের একটি তালিকা তৈরি করেছে। তার আলোকে উঁচু ভাস্কর্য–সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। তালিকায় স্থান পাওয়া ভাস্কর্যগুলোর চারটিই জাপানে অবস্থিত।

দ্য স্ট্যাচু অব ইউনিটি

দ্য স্ট্যাচু অব ইউনিটি
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ভারতের গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত দ্য স্ট্যাচু অব ইউনিটি ভাস্কর্যটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটির উচ্চতা ১৮২ মিটার বা ৫৯৭ ফুট। উচ্চতায় এটি বিগ বেনের দ্বিগুণ এবং স্ট্যাচু অব লিবার্টির তিন গুণ। এটি মূলত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী হন সরদার প্যাটেল। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নর্মদা বাঁধের কাছে ভাস্কর্যটির অবস্থান। ভাস্কর্যটি নির্মাণে গ্রামের স্থানীয় কৃষকেরাও বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন।

স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ

স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ

স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ নামের এ ভাস্কর্যের অবস্থান চীনের হেনান প্রদেশে। এর উচ্চতা ১২৮ মিটার বা প্রায় ৪২০ ফুট। মন্দিরের ওপর সোনালি রঙের বিশালাকারের এ বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। একটি পদ্ম আকৃতির সিংহাসনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মহাজাগতিক বুদ্ধের (ভাইরোকানা বুদ্ধ) মূর্তি এটি। ২০০৮ সালে ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১০ বছর পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য ছিল। তবে ২০১৮ সালে ভারতে দ্য স্ট্যাচু অব ইউনিটি ভাস্কর্যটি তৈরি হওয়ার পর স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ শীর্ষস্থানটি হারায়। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্যের তালিকায় এটির অবস্থান এখন দ্বিতীয়। তবে ‘উঁচু বুদ্ধমূর্তি’ হিসেবে বিশ্বে এর অবস্থান প্রথম।

লেকিয়ুন সেকিয়া

লেকিয়ুন সেকিয়া ভাস্কর্যটির অবস্থান মিয়ানমারের খাতাকান তং এলাকায়। এটির উচ্চতা ১১৬ মিটার বা ৩৮০ ফুট। দেখতে বেশ আকর্ষণীয় এ ভাস্কর্যে গৌতম বুদ্ধকে দুটি আলাদা আলাদা অবস্থানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একটি মূর্তি দাঁড়ানো অবস্থায় এবং আরেকটি মূর্তি শোয়ানো অবস্থায় আছে। মিয়ানমারের খাতাকান তং গ্রামে বিশাল এক প্ল্যাটফর্মের ওপর ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়েছে। ২০০৮ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। শুরুতে এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্যের খ্যাতি অর্জন করেছিল। তবে ওই বছরই স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ নামের ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শেষ হলে লেকিয়ুন সেকিয়া শীর্ষস্থানটি হারায়। স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধের নাম তখন শীর্ষস্থানে চলে আসে।

বিশ্বাস স্বরুপম

বিশ্বাস স্বরুপম

বিশ্বের উঁচু ভাস্কর্যগুলোর তালিকায় নাম থাকা বিশ্বাস স্বরুপম ভাস্কর্যটির অবস্থান ভারতের রাজস্থান রাজ্যের নাথদ্বারায়। হিন্দু দেবতা শিবের এ মূর্তি স্ট্যাচু অব বিলিফ বা বিশ্বাসের মূর্তি নামেও পরিচিত। একটি পার্কের মাঝখানে বাদামি রঙের এ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বে শিব দেবতার যতগুলো ভাস্কর্য আছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে উঁচু।
২০২০ সালে কংক্রিটের তৈরি এ ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০২২ সালে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ভাস্কর্যটির ভেতরে একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র আছে। পাশাপাশি একটি এলিভেটরও আছে সেখানে। এ এলিভেটর ব্যবহার করে পর্যটকেরা বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখতে পারেন।

উশিকু দাইবুতসু

উশিকু দাইবুতসু

জাপানের উশিকু শহরে উশিকু দাইবুতসু ভাস্কর্যটির অবস্থান। এর উচ্চতা ১০০ মিটার বা ৩২৮ ফুট। ১৯৯৩ সালে এটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। তখন এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্যের স্বীকৃতি পেয়েছিল। এরপর ১৫ বছর পর্যন্ত উঁচু ভাস্কর্যের তালিকায় শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছিল উশিকু দাইবুতসু। এটিকে বিশ্বে এযাবৎকালের তৈরি সবচেয়ে ভারী ভাস্কর্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ওজন ৪ হাজার টন। ভাস্কর্যের ভেতর একটি এলিভেটর আছে। এটিতে চড়ে দর্শনার্থীরা ৮৫ মিটার ওপরে স্থাপিত একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে যেতে পারেন। ওই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে মনোরম সব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু শিনরানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্রোঞ্জের এ ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে।

গুইশান গুয়ানিন

গুইশান গুয়ানিন ভাস্কর্যটির অবস্থান চীনের হুনান প্রদেশে। এর উচ্চতা ৯৯ মিটার বা প্রায় ৩২৫ ফুট। বেশ কয়েকটি হাত ও চোখের এ মূর্তি দেখতে হলে দর্শনার্থীদের মিয়িন বৌদ্ধ মন্দিরের অনেকগুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। ২০০৯ সালে সোনালি ব্রোঞ্জের এ ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শেষ হয়। এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪১৮ কোটি টাকা।

মাদার অব অল এশিয়া

মাদার অব অল এশিয়া

ফিলিপাইনের পাগকিলাতানে মাদার অব অল এশিয়া নামের ভাস্কর্যটির অবস্থান। এর উচ্চতা ৯৮ দশমিক ১৫ মিটার বা ৩২২ ফুট। ২০২১ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। এ ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে ‘কুমারী ম্যারি’কে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফিলিপাইনের মন্টেমারিয়া ইন্টারন্যাশনাল পিলগ্রিমেজ অ্যান্ড কনফারেন্স সেন্টার নামক একটি তীর্থস্থানে এ ভাস্কর্যের অবস্থান। ভাস্কর্যটির ভেতরে আছে থিয়েটার, দোকানপাট, খাবার ও আবাসনের জায়গা।

গ্রেট বুদ্ধ অব থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের আং থং প্রদেশে গ্রেট বুদ্ধ অব থাইল্যান্ড মূর্তিটির অবস্থান। এটি বিগ বুদ্ধ বা মহামিন সাকায়ামুনি ভিসেজচাইচর্ন নামেও পরিচিত। থাইল্যান্ডের বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তিগুলোর একটি এটি। গ্রেট বুদ্ধ অব থাইল্যান্ড যে শুধু উঁচু ভাস্কর্য তা নয়, এটি অসাধারণ রকমের চওড়াও। এটি পাশে ৬৩ মিটার বা প্রায় ২০৭ ফুট। ভাস্কর্যটি তৈরি করতে ১৮ বছর সময় লেগেছে। ২০০৮ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। মূর্তিটি দেখতে অনেকটাই জমকালো মনে হলেও এটি আসলে কংক্রিট দিয়ে তৈরি এবং সোনালি রং করা। স্থানীয় বৌদ্ধরা মূর্তিটি তৈরির জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। ভাস্কর্যটির নির্মাণ খরচ বাবদ ২২ লাখ পাউন্ড তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন তাঁরা।

সেন্দাই দাই কানন

জাপানের সেন্দাই শহরে সেন্দাই দাই কানন নামের ভাস্কর্যটির অবস্থান। এর উচ্চতা ৯২ মিটার বা ৩০১ ফুট। সাদা রঙের এ মূর্তি দাই কাননের। এটি ১৯৯১ সালে নির্মিত হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্যের স্বীকৃতি পেয়েছিল।জাপানে দাই কাননের বিভিন্ন মূর্তি আছে। সেন্দাই দাই কানন ভাস্কর্যটি দাই কানন চিন্তামণি পাথর নামের রত্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চিন্তামণি পাথরকে ইচ্ছাপূরণকারী রত্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দাই কানন অব কিতা নো মিয়াকো পার্ক

জাপানে দাই কানন অব কিতা নো মিয়াকো পার্ক নামক ভাস্কর্যটির অবস্থান। এর উচ্চতা ৮৮ মিটার বা ২৮৮ ফুট। বৌদ্ধধর্মের দেবী গুয়ানিনকে উৎসর্গ করে এ মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। গুয়ানিনকে করুণার দেবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৮৯ সালে দাই কানন অব কিতা নো মিয়াকো পার্ক ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্যের খ্যাতি ধরে রেখেছিল। ১৯৮০-এর দশকে চীনের ধনকুবেররা জাপানজুড়ে বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন। এটি তারই একটি। তবে ১৯৮০-এর দশকে তৈরি হওয়া ওই ভাস্কর্যের অনেকগুলোই এখন নষ্ট হয়ে গেছে।