এমপক্স নিয়ে বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ বাড়ছে। এ অবস্থায় এমপক্স কতটা বিপজ্জনক ও এর বিভিন্ন ধরনের মধ্যে পার্থক্য কী—এমন কিছু প্রশ্নের জবাব এখনো পরিষ্কার ও সোজাসাপটা পাওয়া যাচ্ছে না।
এমপক্সের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় গত জুলাইয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ বিষয়ে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। রোগটি মানুষের মধ্যে প্রথম দেখা যায় ১৯৭০–এর দশকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয়।
‘মাঙ্কিপক্স’ নামে আগে পরিচিত এমপক্স কয়েক দশক ধরে আফ্রিকার গুটিকয় দেশে সীমাবদ্ধ ছিল। এতে মৃত্যুহার ছিল ১ থেকে ১০ শতাংশ।
তবে ২০২২ সালে এমপক্স নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়। ওই সময় রোগটি বিশ্বের অন্যান্য অংশ, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশে ছড়ায়।
এমপক্সের ঝুঁকি অনেকটাই নির্ভর করে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার মানের ওপর।অ্যান্টয়েন গেসেইন, এমপক্স বিশেষজ্ঞ ও ভাইরোলজিস্ট
বর্তমানে নতুন যে দেশগুলোতে এমপক্সের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, সেসব দেশে এ রোগে মৃত্যুহার খুবই কম; প্রায় শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
মৃত্যুহারে এমন পার্থক্যের পেছনে এমপক্সের বিভিন্ন ধরন ও মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার মানের প্রভাব থাকতে পারে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে বসবাসকারীরা আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশের নাগরিকদের চেয়ে সম্ভবত দ্রুত ও যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন।
অ্যান্টয়েন গেসেইন এমপক্সের একজন বিশেষজ্ঞ ও ভাইরোলজিস্ট। তাঁর মতে, ‘এমপক্সের ঝুঁকি অনেকটাই নির্ভর করে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার মানের ওপর।’
বর্তমানে এমপক্সে মৃত্যুর হার প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ হার অনেকটাই কমত যদি এমপক্সের রোগীদের বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় সীমাবদ্ধ না থাকতেন।
এমপক্স যেভাবে ছড়ায়, মৃত্যুর হারের পার্থক্যের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে সেটিও। যেমন ২০২২-২৩ সালে এ রোগের বেশির ভাগ সংক্রমণ ঘটেছিল সমকামী ও উভকামী মানুষের মাধ্যমে।
শিশুদের অপুষ্টি
মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার অন্যান্য কারণের একটি হলো, কিছু রোগী শারীরিকভাবে অন্যদের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
এমপক্সে মৃত ব্যক্তিদের বড় অংশ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর। দেশটিতে ১৫ হাজারের বেশি সংক্রমিত ব্যক্তির পাঁচ শতাধিক শিশু। এই শিশুদের অনেকে আবার অপুষ্টির শিকার।
বিপরীতে, কঙ্গোয় ২০২২–২৩ সালে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকালে খুব অল্পসংখ্যক রোগী মারা গেছেন। ওই সময় ১ লাখ সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে মারা যান ২০০ জনের মতো। তাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন প্রাপ্তবয়স্ক ও আগে থেকে এইচআইভি সংক্রমণের শিকার।
এমপক্স যেভাবে ছড়ায়, মৃত্যুর হারের পার্থক্যের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে সেটিও। যেমন ২০২২–২৩ সালে এ রোগের বেশির ভাগ সংক্রমণ ঘটেছিল সমকামী ও উভকামী মানুষের মাধ্যমে।
এমপক্সের জটিলতা বা ঝুঁকির পেছনে থাকা কারণগুলোর আরেকটি হলো এটির ধরন বা পরিবার; যেখানে নির্দিষ্ট ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার কম বা বেশি হওয়ায় ভূমিকা রাখে।
এমপক্সের ধরনগুলো যখন স্বাস্থ্যঝুঁকি বা সংক্রমণ তৈরি করছে, তখন এগুলোর মধ্যকার পার্থক্য নিরূপণে রীতিমতো লড়তে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের।
ধরনগুলোর মধ্যকার পার্থক্য
২০২২–২৩ সালে এমপক্সের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল মূলত মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের ‘ক্লেড ২’ ধরনে। ধরনটির উপস্থিতি প্রধানত পশ্চিম আফ্রিকার দেশে দেখা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও শনাক্ত হয়েছে এর উপস্থিতি।
কঙ্গোয় এখন যে প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, সেটির জন্য দায়ী এমপক্সের ‘ক্লেড ১’ ধরন। এটি মূলত আফ্রিকার মধ্যাঞ্চলীয় দেশগুলোতে পাওয়া গেছে।
তবে একই দেশগুলোতে প্রধানত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে এমপক্সের যে সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, সেটির পেছনে রয়েছে ‘ক্লেড ১বি’। এটি ‘ক্লেড ১’ থেকে উদ্ভূত। ‘ক্লেড ১বি’ ধরনের সংক্রমণ দৃশ্যত শুধু এখনই দেখা যাচ্ছে।
ইতিপূর্বে এমপক্সের যেসব ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেসবের চেয়ে ‘ক্লেড ১বি’ বেশি বিপজ্জনক বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরেও দেখা দিয়েছে সংশয়।
এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের ভাইরোলজিস্ট ম্যারিয়ন কুপম্যানস যুক্তরাজ্যভিত্তিক সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারকে বলেন, ‘ক্লেড ১বি’র জটিলতা ও সংক্রমণ সক্ষমতা নিয়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলোতে যেসব দাবি করা হচ্ছে, সেসবের পেছনে প্রমাণ খুব সীমিত।
কুপম্যানস আরও বলেন, ‘আমরা যা জানি তা হলো, ক্লেড ১–এর সংক্রমণ ক্লেড ২–এর সংক্রমণের চেয়ে বেশি গুরুতর।’ অতীতে, ক্লেড ২–এর চেয়ে ক্লেড ১–এর সংক্রমণে বেশি মানুষ মারা গেছেন।
অবশ্য, গবেষকেরা এমপক্সের বেশি ঝুঁকির পেছনে ঠিক কোন ধরন দায়ী, সে বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।
ভাইরোলজিস্ট গেসেইন বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের মধ্যে তুলনা করা খুব জটিল কাজ। এ ক্ষেত্রে রোগের প্রেক্ষাপট ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর ধরন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।’
‘অপুষ্টির শিকার একটি শিশু ও এইচআইভি–পজিটিভ আক্রান্ত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে আপনি কীভাবে তুলনা করবেন’, প্রশ্ন করেন এই ভাইরোলজিস্ট।