জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ ‘সেকেলে, অন্যায্য ও অকার্যকর’ একটি ব্যবস্থা। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধে ব্যর্থতা সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আল-জাজিরা অ্যারাবিয়াকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এসব কথা বলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা বিভিন্ন সময়ে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে বাধা হয়েছে।
এ বিষয়ে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এটা (নিরাপত্তা পরিষদ) বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
সমালোচনা করে জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘প্রকৃত সত্য হলো, সুদান, গাজা, ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদ নিজের সক্ষমতা প্রমাণে পদ্ধতিগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
আন্তোনিও গুতেরেস ২০১৭ সাল থেকে জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
১১ মাসের বেশি সময় ধরে চলা গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা, বিশেষ করে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো গাজায় প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ বন্ধে রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আর এ ব্যর্থতা জাতিসংঘের অন্য সংস্থাগুলোকে আশাহত করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসংঘ মানে শুধু নিরাপত্তা পরিষদ নয়।’ তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের কর্মীরা যুদ্ধক্ষেত্রে দারুণ কাজ করছেন; বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কর্মীরা। এটাও সত্য, মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবে, নিরাপত্তা পরিষদ তাদের ব্যর্থ করেছে।
গুতেরেস বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতা মাঠপর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের গুরুতর অসুবিধায় ফেলেছে।’
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর থেকে সেখানে ইউএনআরডব্লিউএর ২০০ কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানান জাতিসংঘের মহাসচিব। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, গাজায় যেসব ফিলিস্তিনির কাছে সংস্থাটির কার্যক্রম পৌঁছাতে পেরেছে, তাঁরা এর স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এমনকি এ বছরের শুরুর দিকে গাজায় ইউএনআরডব্লিউএর ত্রাণ কার্যক্রম ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছিল। ইসরায়েল অভিযোগ করেছিল, সংস্থাটির কর্মীরা ‘সন্ত্রাসবাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত। তখন কয়েকটি দেশ অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তী সময়ে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, শুরুর দিকে কিছু দেশ এ কার্যক্রমে অর্থায়ন করতে দ্বিধায় ভুগেছে। কোনো কোনো দেশ অর্থায়ন স্থগিত করেছে। তবে ইউএনআরডব্লিউএ মেরুদণ্ড সোজা রেখেই গাজাবাসীকে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে গেছে।
আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, যখনই পরিস্থিতি অনুকূলে এসেছে, পোলিও টিকা কার্যক্রমের মতো গাজাবাসীর জন্য দ্রুত কাজ করে গেছে ইউএনআরডব্লিউএ।
সাক্ষাৎকারে আন্তোনিও গুতেরেস অভিযোগ করেন, বিশ্বের বড় শক্তিগুলো গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রদর্শন করছে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। এরপরও তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ দায়মুক্তির পরিবেশে বসবাস করছি।’
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলকে আরও চাপ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র—এমনটাই মত জাতিসংঘের মহাসচিবের। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কে আরও কঠোর হতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমরা আহ্বান জানিয়েছি।’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারত্ব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি ও চৌকি বিস্তৃত করার চলমান প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেআইনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পশ্চিম তীরে সম্ভাব্য যেকোনো দখলদারি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। গাজা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হবে।’
ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি অবস্থান আছে উল্লেখ করে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, অবস্থানটি স্পষ্ট, এটা দখলদারত্ব। এই দখলদারত্ব মোটেও বৈধ নয়।