এই শান্তি প্রস্তাব প্রকাশের আগে চীনের সঙ্গে প্রস্তাবটি নিয়ে বৈঠক করতে চান জেলেনস্কি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সংঘাত ও যুদ্ধে কারও লাভ নেই।
এটি অত্যন্ত ভালো ব্যাপার যে চীন ইউক্রেন সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেছে: জেলেনস্কি।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে এক বছর ধরে চলা যুদ্ধে বিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন। চীন গতকাল এ আহ্বান জানিয়ে বলেছে, দুই পক্ষের মধ্যকার উত্তেজনা ধারাবাহিক প্রশমনের মধ্য দিয়েই শান্তির পথ খুলবে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বর্ষপূর্তিতে গতকাল শুক্রবার এ লক্ষ্যে ১২ দফা শান্তি প্রস্তাবে চীন এমন আহ্বান জানায়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার সকালে দফাগুলো প্রকাশ করে।
যুদ্ধের এক বছরে দুই পক্ষের লাখো সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ইউক্রেনের ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ। দৃশ্যত অন্তহীন এ যুদ্ধের বড় ধাক্কা লেগেছে দুই দেশের অর্থনীতিতে।
দফাগুলোয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপ করা পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। চীন ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে মানবিক করিডর স্থাপনের ওপরও জোর দিয়েছে। একই সঙ্গে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি নিশ্চিতের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায় বৈশ্বিক এই পরাশক্তি।
১২ দফা শান্তি প্রস্তাব প্রকাশের দিনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংঘাত ও যুদ্ধে কারও লাভ নেই।’ এতে আরও বলা হয়, সব পক্ষকে যৌক্তিক আচরণের পাশাপাশি সংযম প্রদর্শন করতে হবে। সংঘাতকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেওয়া কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে হবে।
চীন বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেছে। এতে আরও বলা দয়, ‘সংঘাতের পক্ষগুলোর আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা উচিত। বেসামরিক নাগরিক বা বেসামরিক স্থাপনাগুলোয় আক্রমণ এড়ানো উচিত। এ যুদ্ধে চীন কৌশলগত মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে নিজেকে একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই গত বুধবার মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ওয়াং ইর সফরের পর মস্কো বলেছে, সংঘাতের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির পন্থা বিষয়ে তাদের মতামত উপস্থাপন করেছে বেইজিং। সংকটের মূল কারণ ও এর রাজনৈতিক নিষ্পত্তির উপায় সম্পর্কে তাদের মতামত আমাদের অবহিত করেছে। তবে পৃথক (শান্তি) পরিকল্পনা নিয়ে কোনো কথা হয়নি।
এএফপি জানায়, চীনের ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশের আগে তা নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কি গতকাল বলেছেন, তিনি চীনের প্রতিশ্রুত শান্তি পরিকল্পনা দেখেননি তবে পরিকল্পনাটি মূল্যায়ন করার আগে বেইজিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে চান।
এদিকে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং মস্কোর আগ্রাসনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের দাবিসহ জেলেনস্কি তাঁর নিজস্ব ১০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের কিয়েভে সফরকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘চীন আমাদের বলেছে, তাদের একটি শান্তি উদ্যোগ রয়েছে।
তবে আমি এখনো নথিটি দেখিনি।’ জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি মূলত অত্যন্ত ভালো একটি ব্যাপার যে চীন ইউক্রেন সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেছে এবং এ–সংক্রান্ত কিছু সংকেত পাঠিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের প্রস্তাবসম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট তথ্য জানার পর আমরা কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে।