চীনে করোনার বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজধানী বেইজিংয়ের অন্তত তিনজন বিক্ষোভকারী জানান, তাঁদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে পুলিশ। ফলে ব্যাপক হারে ধরপাকড় করা হতে পারে বলে আশঙ্কা বিক্ষোভকারীদের। খবর রয়টার্স ও এএফপির।
একজন বিক্ষোভকারী জানান, পুলিশের পরিচয় দিয়ে তাঁকে একজন ফোন করেছিলেন। গত রোববার রাতে কোথায় ছিলেন, কী করেছেন, তা নিকটস্থ থানায় গিয়ে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে তাঁকে।
অন্য একজন বিক্ষোভকারী জানান, তিনি বেইজিংয়ের একটি কলেজে পড়েন। কলেজ কর্তৃপক্ষকে ফোন করে তাঁর গত রোববার রাতের অবস্থান সম্পর্কে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার থেকেই বেইজিং, সাংহাইসহ বড় শহরগুলোর রাস্তায় পুলিশের কড়াকড়ি দেখা গেছে। আজ মঙ্গলবার একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘সড়কে অনেক পুলিশ। তারা পরিচয়পত্র দেখছে। পরিচয়পত্র দেখে আমার এক বন্ধুকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। সে রোববার রাতের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল।’
পূর্বাঞ্চলের হাংঝু শহরের এক ভিডিওতে গতকাল সোমবার রাতে শহরের কেন্দ্রস্থলে কয়েক শ পুলিশ দেখা যায়। তারা বিক্ষোভকারীদের সেখানে জড়ো হতে দেয়নি। অন্য একটি ভিডিওতে একজন বিক্ষোভকারীকে ধরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় অন্যরা তাঁকে পুলিশের কাছ থেকে টেনে আনার চেষ্টা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
চীনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণদের অনেকের হাতে সাদা কাগজ দেখা যায়। এ জন্য চলমান আন্দোলনকে অনেকে ‘সাদা কাগজের বিক্ষোভ’ বলছেন। বিক্ষোভকারীরা বাক্স্বাধীনতা না থাকার প্রতীক হিসেবে সাদা কাগজ দেখাচ্ছেন।
ধরপাকড় ও বিক্ষোভকারীদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে জানতে বেইজিংয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান আজ সতর্ক করে বলেছেন, জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার অবশ্যই রক্ষা করা হবে, কিন্তু সেটা একটা আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে।
এদিকে চলমান বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, নিজের কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই, এমন কোনো কর্মকাণ্ডে সাংবাদিকদের জড়িত হওয়া উচিত হবে না। সাংহাইয়ে বিক্ষোভ চলাকালে সেই তথ্য সংগ্রহের সময় বিবিসির সাংবাদিক এডওয়ার্ড লরেন্সকে মারধর ও আটকে রাখার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘শূন্য করোনা নীতির’ বিরুদ্ধে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমে বাড়তে থাকা ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশের উরুমকি শহরের একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের মৃত্যু হয়। বাসিন্দাদের ভবনে আটকে পড়া ও উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হওয়ার জন্য করোনার কঠোর বিধিনিষেধকে দায়ী করা হয়। এই ঘটনার জেরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এই বিক্ষোভের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, চীনা জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, মানুষকে সমবেত হওয়ার, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। জন কিরবি আরও বলেন, হোয়াইট হাউস শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সমর্থন করে।