শেষ হলো কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস, ক্ষমতা আরও পোক্ত সির
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেস আজ শনিবার সম্পন্ন হয়েছে। এতে পার্টির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ক্ষমতা বাড়িয়ে সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার এ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্টির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নেই, এমন দুই নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয়নি প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও ওয়াং ইয়াংকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরবর্তী পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে সির ঘনিষ্ঠরা যে জায়গা পাচ্ছেন, এটা তারই ইঙ্গিত। আগামীকাল রোববার দুপুরে এই কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে।
লি মার্চে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের প্রধান ওয়াং। দুজনের বয়সই ৬৭ বছর। চীনের প্রথা অনুযায়ী, তাঁরা আরেক মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য সাত সদস্যের শক্তিশালী স্ট্যান্ডিং কমিটিতে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন।
বিশ্লেষক ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সির সঙ্গে এই দুজনের কারোরই দীর্ঘ মেয়াদে ঘনিষ্ঠতা ছিল না। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে নতুন চার মুখকে জায়গা করে দিতে পারেন তিনি।
এই কমিটির বর্তমান দুই সদস্য ওয়াং হানিং (৬৭) ও ঝাও লেজি (৬৫) দুজনকেই সির ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়। দুজনই ২০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে তাঁদের ফের রাখা হতে পারে।
লি ও ওয়াং দুজনেরই কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। একসময় গোষ্ঠীটি প্রভাবশালী ছিল। তবে সির অধীনে সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে বলে বিশ্লেষকেরা দাবি করছেন। ওয়াং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লির স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন বলে কিছু পর্যবেক্ষক ধারণা করেছিলেন।
আজ দলীয় গঠনতন্ত্রে সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে পার্টি। এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য দলে সির মূল অবস্থান (স্ট্যাটাস) এবং দলের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারার দিকনির্দেশক ভূমিকাকে পোক্ত করা।
গ্রেট হলে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে অংশ নেওয়া সদস্যরা হাত তুলে সমর্থন জানিয়ে নতুন সংবিধান অনুমোদন করেন। অবশ্য চলতি সপ্তাহে চলা এই কংগ্রেসের অধিকাংশ কার্যক্রমই হয়েছিল রুদ্ধদ্বার।
রোববার প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের শুরুতে পরবর্তী পলিটব্যুরো নির্বাচিত করবেন নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা। সাধারণত এই কমিটির সদস্য ২৫ জন হয়ে থাকেন।
এরপর একই দিন কেন্দ্রীয় কমিটি পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি নির্বাচিত করবে। এতে ৬৯ বছর বয়সী সি তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর সাধারণ সম্পাদক হওয়াটা অনেকটাই নিশ্চিত।
যখন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সি গ্রেট হলে সাংবাদিকদের সামনে আসবেন, তখন নতুন নেতৃত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ সময় পদমর্যাদা অনুযায়ী পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্য সদস্যরা তাঁকে অনুসরণ করবেন।
তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিত হলে চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক মাও সে-তুংয়ের পরই সির অবস্থান পোক্ত হবে। মাও চীনা পিপলস রিপাবলিকের প্রতিষ্ঠাতা নেতা।
নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা স্টাডিজের অধ্যাপক শ্রীকান্ত কোন্দাপল্লী বলেন, ‘সি চিন পিং শুধু সাধারণ সম্পাদকের পদটাই নয়, শীর্ষ অবস্থানও সুসংহত করার চেষ্টা করছেন ।’