তাইওয়ান প্রণালি ও দক্ষিণ চীন সাগরে স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চীনের শীর্ষ এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। এ সময় দুই দেশের মধ্যে সামরিক পর্যায়ে আরও আলাপ-আলোচনার বিষয়ে পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।
গত মঙ্গলবার তিন দিনের সফরে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছান জ্যাক সুলিভান। এ সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-সহ শীর্ষ পর্যায়ের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চীন সফরে গেলেন।
এ সফরের অংশ হিসেবে আজ সকালে চীনের সেনাপ্রধান ঝ্যাং ইউশিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সুলিভান। বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তিনি চীনা সেনাপ্রধানকে বলেন, ‘এ ধরনের মতবিনিময়ের সুযোগ পাওয়াটা আমাদের জন্য বিরল।’
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, জ্যাক সুলিভান আরও বলেছেন, ‘বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক দায়িত্বের সঙ্গে সামলানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে আমি মনে করি, এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ এ সময় চীন সফরের জন্য সুলিভানকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
বৈঠকে তাইওয়ান প্রণালিতে ‘স্থিতিশীলতার’ গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা। দক্ষিণ চীন সাগরে ‘নৌযান চলাচলের স্বাধীনতার’ ওপর জোর দেন তিনি। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এ অঞ্চলে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চীন ও ফিলিপাইন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষাশিল্পে চীনের সহযোগিতা নিয়ে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জ্যাক সুলিভান। কথা বলেন সাইবারজগতে ভুল–বোঝাবুঝি এড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।
এদিকে গতকাল বুধবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন সুলিভান। এর আগে গত দেড় বছরে পাঁচবার সাক্ষাৎ হয়েছে তাঁদের। এর মধ্যে ওয়াশিংটন, ভিয়েনা, মাল্টা ও ব্যাংককে চারবার দেখা করেছেন তাঁরা। সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বৈঠক হয় ওয়াং ও সুলিভানের।
আগামী সপ্তাহগুলোতে দুই দেশে নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে আলাপের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন ওয়াং ও সুলিভান। বিতর্কিত সমুদ্র অঞ্চলে দিন দিন বাড়তে থাকা চীনের তৎপরতা নিয়েও মতবিনিময় করেন তাঁরা। এ সময় ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মিত্রদের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা মেনে চলা হবে বলে আবারও নিশ্চিত করেন সুলিভান।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ‘সমুদ্রে ফিলিপাইনের আইনসংগত অভিযানের বিরুদ্ধে চীন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে বিষয়েও গতকালের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।’
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, বৈঠকে নিজেদের নানা উদ্বেগের কথাও সুলিভানের কাছে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং। তিনি বলেন, ‘চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনের অজুহাত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো ব্যবহার করতে পারবে না। এ ছাড়া আইন লঙ্ঘন করে ফিলিপাইন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রতিও সমর্থন জানাতে পারবে না ওয়াশিংটন।’