৪০টির বেশি দেশ ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অনেক দেশই এই জোটে যোগ দিতে তাদের প্রতিনিধিদল সেখানে পাঠিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে এর সদস্যদেশের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হলো। একই সঙ্গে এটাও বলা হলো, ব্রিকস যুক্তরাষ্ট্র ও ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ বা শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির জোট জি-২০-এর বিরোধী কোনো শিবির নয়। এর লক্ষ্য, কথিত তৃতীয় বিশ্ব, ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর উন্নয়ন। একই সঙ্গে এই সম্মেলনকে ঐতিহাসিকও বলছেন নেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। ব্রিকসের সদস্যদেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এ জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোহানেসবার্গে পৌঁছেছেন।
রাশিয়া থেকে সেখানে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এই সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন তিনি।
গতকাল এই সম্মেলন থেকে লুলা বলেন, ‘জি-৭, জি-২০ বা যুক্তরাষ্ট্র—আমরা কারও বিরোধী শিবির হতে চাই না। আমরা নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হতে চাই।’
এদিকে ব্রিকসের সম্প্রসারণের বার্তা দিয়েছেন সি চিন পিং ও সম্মেলনের আয়োজক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। গতকাল সির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে রামাফোসা বলেন, ব্রিকসের প্রসারের ক্ষেত্রে তাঁরা দুজনই একমত। তিনি আরও বলেন, বহুত্ববাদের প্রসার, বিশ্বজুড়ে সহযোগিতা; বৈশ্বিক যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাতে পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ব্রিকস।
গতকাল সকালে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে সি চিন পিং বলেন, ব্রিকসের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক।
জোহানেসবার্গে গতকাল ছিল সম্মেলনের প্রথম দিন। এই সম্মেলন চলবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। গতকাল সেখানে নেতাদের নৈশভোজে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ব্রিকসের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা কী হবে, সেটাও নির্ধারিত হওয়ার কথা এবারের সম্মেলন থেকে।
চীন আশা করছে, এবারের সম্মেলন থেকে ব্রিকসের সম্প্রসারণের ঘোষণা আসবে। রাশিয়াও এমনটা আশা করছে। নতুন সদস্যদের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৪০টির বেশি দেশ ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অনেক দেশই এই জোটে যোগ দিতে তাদের প্রতিনিধিদল জোহানেসবার্গে পাঠিয়েছে।
সময়ের দিক থেকে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মূলত বৈশ্বিক একটি বিভাজন সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই যুদ্ধ ঘিরে পশ্চিমা বিশ্ব এককাট্টা হয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। আর রাশিয়া যে দেশগুলোকে তার পাশে পেয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম চীন।
ব্রিকসের উদ্যোক্তাদের অন্যতমও এই চীন। এ ছাড়া যুদ্ধ ইস্যুতে জাতিসংঘে যে দেশগুলো নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ভারত রয়েছে। তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকেও বিরত থেকেছে। একই পথে হেঁটেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।