যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের গোয়েন্দা বা নজরদারিমূলক বেলুন ভেসে বেড়ানোর ঘটনা অনেক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এর একটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে নজরদারি করার জন্য চীন কেন তুলনামূলক কম আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করতে চাইল।
চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা অঙ্গরাজ্যের আকাশে যে বেলুন উড়তে দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে সেটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত একটি আকাশযান। এটি বাতাসের কারণে পরিকল্পিত যাত্রাপথ থেকে লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে। তবে, চীন যা–ই বলুক, মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা, এটি ‘বেশি উঁচুতে ভেসে বেড়াতে সক্ষম গোয়েন্দা বা নজরদারিমূলক’ উপকরণ।
সম্ভবত বেইজিং ওয়াশিংটনকে এ বার্তা দিতে চাইছে যে তারা সম্পর্কের উন্নয়ন চায়, তবে অব্যাহত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতেও প্রস্তুত। আর এ প্রতিযোগিতা তারা চালিয়ে যাবে দুই পক্ষের মধ্যকার উত্তেজনা ভীষণভাবে বাড়ানো ছাড়াই যেকোনো পন্থা অবলম্বন করে।হি ইউয়ান মিং, বায়ুশক্তি–বিশেষজ্ঞ
চীনের পাঠানো নির্দিষ্ট ওই বেলুনের উদ্দেশ্য ও সক্ষমতা যা–ই থাকুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র এটিকে এক গুরুতর হুমকি হিসেবে নিয়েছে। চীনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের পরিকল্পিত সফর বাতিল করা এর প্রমাণ। আগামীকাল রোববার দুই দিনব্যাপী তাঁর এ সফর শুরু হওয়ার কথা ছিল।
নজরদারির যত ধরনের অতি পুরোনো প্রযুক্তি রয়েছে, বেলুন পাঠানো সেগুলোর একটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের সেনাবাহিনী নজরদারির কাজে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয় বোমা ব্যবহার করেছিল। শীতল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকেও ব্যাপকভাবে এগুলো ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
চীনের পাঠানো নির্দিষ্ট ওই বেলুনের উদ্দেশ্য ও সক্ষমতা যা-ই থাকুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র এটিকে এক গুরুতর হুমকি হিসেবে নিয়েছে। চীনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের পরিকল্পিত সফর বাতিল করা এর প্রমাণ। আগামীকাল রোববার দুই দিনব্যাপী তাঁর এ সফর শুরু হওয়ার কথা ছিল।
অতিসম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রও দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের নজরদারি কার্যক্রমে বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম বেলুনজাতীয় উপকরণ ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গেছে। আধুনিক প্রযুক্তির বেলুনগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত ২৪–৩৭ কিলোমিটার (৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ফুট) উচ্চতায় ভেসে বেড়াতে সক্ষম।
বায়ুশক্তি–বিশেষজ্ঞ হি ইউয়ান মিং বিবিসিকে বলেন, সম্ভবত বেইজিং ওয়াশিংটনকে এ বার্তা দিতে চাইছে যে তারা সম্পর্কের উন্নয়ন চায়, তবে অব্যাহত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতেও প্রস্তুত। আর এ প্রতিযোগিতা তারা চালিয়ে যাবে দুই পক্ষের মধ্যকার উত্তেজনা ভীষণভাবে বাড়ানো ছাড়াই যেকোনো পন্থা অবলম্বন করে।
বিশেষজ্ঞরা বোঝাতে চাইছেন, এসব বেলুনে গুপ্তচর ক্যামেরা ও রাডার সেন্সরের মতো আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা সম্ভব। আর নজরদারিতে এমন বেলুন ব্যবহার করার কিছু সুবিধা আছে। প্রধানতম সুবিধা হলো, এটি কম ব্যয়বহুল ও ড্রোন বা স্যাটেলাইটের চেয়ে মোতায়েন করা তুলনামূলক সহজ।
হি ইউয়ান মিং আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে দৃশ্যত নির্দোষ বেলুন পাঠানোর চেয়ে ভালো পন্থা আর কী হতে পারে?
‘চীনা বেলুনের প্রত্যাশিত পথ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি। এটি এ ইঙ্গিত দেয় যে সম্ভবত এটি ভুল পথে চলে আসেনি’, বলেন বিশেষজ্ঞ হি ইউয়ান।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর গত বৃহস্পতিবার বলেছে, ‘বেলুনটি এমন এক স্থানে অবস্থান করছিল, যেখানে বেসামরিক বিমান চলাচল ব্যবস্থা চালু ছিল।’
তবে চীনের বিশেষজ্ঞ বেঞ্জামিন হো বলেন, বেইজিংয়ের হাতে নজরদারি চালানোর জন্য এর চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সমন্বয়ক ড. হো। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামোতে গোয়েন্দাগিরি চালানোর জন্য বা সেখান থেকে কোনো ধরনের তথ্য জোগাড় করার জন্য চীনের কাছ অন্যান্য উপায় রয়েছে। বেলুন পাঠানোর ওই ঘটনা মার্কিনদের জন্য একটা বার্তা। সেই সঙ্গে, মার্কিনরা এ ঘটনায় কী প্রতিক্রিয়া দেখান, সেটিও দেখা চীনের উদ্দেশ্য।
এমনকি বেলুন পাঠানোর পেছনে চীনের আরেকটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র যেন বেলুনটি শনাক্ত করে।
বেলুন পাঠানোর কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘কার্নেগি কাউন্সিল ফর এথিকস ইন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স’ নামের প্রতিষ্ঠানের আর্থার হল্যান্ড মিশেল। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে বেলুনটি শনাক্ত করানোই চীনের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে। সম্ভবত, চীন বেলুন এ কারণে ব্যবহার করেছে; যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে পারে, গুরুতর উত্তেজনার ঝুঁকি এড়িয়ে দেশটিতে প্রবেশ করার মতো আধুনিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে বেইজিংয়ের। এ ক্ষেত্রে বেলুন এক আদর্শ উপায়।
নিঃসন্দেহে, বিশেষজ্ঞরা বোঝাতে চাইছেন, এসব বেলুনে গুপ্তচর ক্যামেরা ও রাডার সেন্সরের মতো আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা সম্ভব। আর নজরদারিতে এমন বেলুন ব্যবহার করার কিছু সুবিধা আছে। প্রধানতম সুবিধা হলো, এটি কম ব্যয়বহুল ও ড্রোন বা স্যাটেলাইটের চেয়ে মোতায়েন করা তুলনামূলক সহজ।
বেলুনের ধীরগতির কারণে লক্ষ্যস্থলের আকাশে এটি বেশি সময় অবস্থান করে ধীর–স্থিরভাবে নজরদারি চালাতে পারে। অন্যদিকে, স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে, এর যাত্রাপথ একেবারে সুনির্দিষ্ট।