প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে চীন। এ বছর প্রতিরক্ষা খাতে ৭ দশমিক ২ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ২২ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার করা হয়েছে। গতকাল রোববার দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। গত বছর এ খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ। দেশটির পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশনের শুরুতে এ তথ্য জানানো হয়। দেশটির বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং সতর্ক করে বলেন, বেইজিংয়ের উত্থানের পথে বাইরের হুমকি বাড়ছে।
চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় গত বছরের চেয়ে বাড়ানো হলেও তা বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। তবে পৃথক আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন এ বছর প্রায় ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
চীনের সামরিক বাজেট বিশ্বের দ্বিতীয়। বাৎসরিক সামরিক বাজেটের দিক থেকে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর চীনের সামরিক বাজেট ছিল ২১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তবে বিশ্লেষকেরা বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে চীন সামরিক খাতে যত বাজেট ঘোষণা করে, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের সামরিক ব্যয় অনেক কম। এ বছর যুক্তরাষ্ট্র ৮০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সামরিক ব্যয়ের বাজেট নির্ধারণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির মোকাবিলায় বেইজিং সম্প্রতি প্রতিরক্ষা খাত আধুনিকায়নে ব্যাপক ব্যয় বাড়িয়েছে। তাদের লক্ষ্য, বিশাল সেনাবাহিনীকে বিশ্বমানের শক্তিতে রূপান্তরিত করা। গত বছর তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে।
বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ হিসেবে মনে করে। প্রয়োজনে তা জোর করে একত্রীকরণের হুমকিও দিয়েছে। গত বছর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর এই দ্বীপ ঘিরে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায় বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের গণতন্ত্র সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গতকাল সরকারের কাজের প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য একটি পৃথক বক্তৃতায় লি কেছিয়াং সতর্ক করে বলেন, চীনকে দমন ও দমিয়ে রাখতে বাহ্যিক প্রচেষ্টা ক্রমে বাড়ছে। সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি আরও বাড়ানো উচিত। যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণে আরও শক্তি বাড়ানো ও সব ক্ষেত্রে সামরিক শক্তিকে জোরদার করতে হবে।
গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূল ধারণার প্রতি তাইওয়ানের জনগণের যে অঙ্গীকার, তাকে বেইজিংয়ের শ্রদ্ধা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে তাইপে। তাইওয়ান ইস্যুতে গতকাল রোববার চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াংয়ের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাইপে এ কথা বলেছে।
চীনা পার্লামেন্টের বার্ষিক সভার উদ্বোধনীতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেইজিং ‘এক চীন’ নীতিতে অটল রয়েছে। বেইজিংয়ের এ নীতির অর্থ হলো, তাইওয়ান হলো চীনের অংশ। লি কেছিয়াং বলেন, চীন সরকারের উচিত, তাইওয়ানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের প্রক্রিয়াকে বেইজিংয়ের এগিয়ে নেওয়া। তাইওয়ান সমস্যার সমাধানে দলীয় নীতি বাস্তবায়ন করা।
তবে তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে মত দেন চীনা প্রধানমন্ত্রী। প্রতিরক্ষা বিষয়ে পৃথক এক মন্তব্যে লি কেছিয়াং বলেন, চীনা সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ প্রস্তুতি বাড়ানো উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি তাইওয়ানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি।
চীনা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাইপের পক্ষ থেকে বলা হয়, বেইজিংয়ের উচিত, তাইওয়ান-সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাস্তবসম্মতভাবে দেখা। যুক্তিসংগত, ন্যায্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবেচনা করা, যাতে আলাপ-আলোচনায় সুন্দর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। তাইওয়ানের নিজস্ব সংবিধান ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা রয়েছে। তাইওয়ানের বেশির ভাগ বাসিন্দা নিজেদের তাইওয়ানি হিসেবে পরিচয় দেন। অপর দিকে তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে চীন। তাই তারা তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।