আলো ঝলমলে শহর অন্ধকারে ডুবছে

চীনের সাংহাই শহরের আলো ঝলমলে এলাকা ‘দ্য বান্ড’ অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র
 ছবি: রয়টার্স

চীনের সাংহাই শহরের আলো ঝলমলে একটি এলাকা ‘দ্য বান্ড’। সেখানে রয়েছে আকাশচুম্বী ভবন। আধুনিক নির্মাণশৈলী আর ঐতিহাসিক এসব ভবনের জন্য নদীতীরবর্তী এলাকাটি অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, সেখানে দুই দিন আলো জ্বলবে না। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তীব্র খরা দেখা দিয়েছে। এতে তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ–সংকট। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে প্রধান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, বিদ্যুৎ–সংকটে তাদের উৎপাদন কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় গতকাল রোববার একটি নোটিশ দিয়েছে সাংহাই ল্যান্ডস্কেপিং অ্যান্ড সিটি অ্যাপিয়ারেন্স অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ব্যুরো। নোটিশে বলা হয়েছে, দ্য বান্ড নামে পরিচিত ওই এলাকায় আজ সোম ও কাল মঙ্গলবার আলো জ্বলবে না। সাংহাই শহরের সর্ববৃহৎ নদী হুয়াংপুর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে দ্য বান্ড নামের এলাকাটি।
নোটিশে কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ‘এর ফলে যে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে, আমরা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’

কয়েক সপ্তাহ ধরে সাংহাইসহ ইয়াংশি ডেল্টা অঞ্চল এবং চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। এতে অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে দাবানল। খাদ্যশস্য রক্ষায় বিশেষ দল মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতে এ সপ্তাহে চীনে প্রথমবারের মতো জাতীয় খরা সতর্কতা জারি হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার হলুদ সতর্কতা বা ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি করেছে চীন সরকার। দেশটিতে খরা নিয়ে যেসব জরুরি সতর্কতা রয়েছে, এর মধ্যে হলুদ তৃতীয় সর্বোচ্চ।
সিচুয়ান প্রদেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। প্রাদেশিক কর্মকর্তারা সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাপমাত্রা বাড়তে থাকা এবং বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ–সংকট শুরু হয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের নেওয়া পদক্ষেপের মেয়াদ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ দিন বাড়ানো হয়েছে। এসব পদক্ষেপের কারণে কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সীমিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

জার্মান গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভকসওয়াগন বিবিসিকে বলেছে, বিদ্যুৎ–সংকটের কারণে সিচুয়ানের রাজধানী শহর চেংদুতে তাদের কারখানাটি এখন বন্ধ রয়েছে।
সিচুয়ানে থাকা কারখানা বন্ধ করে দেওয়া অ্যাপলের সরবরাহকারী ফক্সকন বলেছে, এখন তাদের কারখানায় উৎপাদনের ওপর প্রভাব অতটা উল্লেখযোগ্য নয়।

জাপানের গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা বিবিসিকে জানিয়েছে, নিজেদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যম সিচুয়ানে ধীরে ধীরে উৎপাদন শুরু করেছে তারা।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিসকসের চীন ও উত্তর এশিয়াবিষয়ক সহযোগী বিশ্লেষক চেনইয়ু উ বলেন, বিদ্যুৎ–সংকটের এ প্রভাব হয়তো বেশি দিন থাকবে না।