মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনা প্রতিরক্ষাপ্রধান লি শাংফুকে সম্মেলনের ফাঁকে আলাদা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান।
সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে, এমন ভুল-বোঝাবুঝি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সংলাপ অত্যাবশ্যক। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গতকাল শনিবার এ কথা বলেন। চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর লয়েড অস্টিন এ কথা বলেন।
গত শুক্রবার সিঙ্গাপুরে শুরু হয়েছে তিন দিনের ‘সাংগ্রি-লা-ডায়ালগ’ প্রতিরক্ষা সম্মেলন। সম্মেলনের রাতের খাবার অনুষ্ঠানে লয়েড অস্টিন ও চীনের প্রতিরক্ষাপ্রধান লি শাংফু প্রথমবারের মতো হাত মেলান ও সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা বলেন। পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আরও দীর্ঘ সময় আলোচনার প্রত্যাশা করা হয়েছিল।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বর্তমানে এশিয়া সফর করছেন। বেইজিংকে টক্কর দিতে তিনি এর আগে জাপান সফর করেছেন। তিনি ভারত সফরেও যাবেন। তিনি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জোট ও অংশীদারত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।
সম্মেলনে অস্টিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, চীনের সঙ্গে যোগাযোগের উন্মুক্ত পথ থাকা অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে এ যোগাযোগ জরুরি। আমরা যত বেশি আলোচনা করব, তত বেশি ভুল-বোঝাবুঝি ও হিসাবের গরমিল ধরা যাবে। কারণ, এ ধরনের ভুল-বোঝাবুঝি থেকে সংকট বা সংঘর্ষের সূচনা হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে লিকে সম্মেলনের ফাঁকে আলাদা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে বেইজিং তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বেইজিংয়ের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে জানে, বর্তমান সামরিক যোগাযোগের এই কঠিন পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অস্টিনের বক্তব্যের দ্রুত জবাব দিয়েছেন চীনের প্রতিনিধিরা। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যাং হেফেই বলেন, ‘পেন্টাগনপ্রধান তাঁর বক্তব্যে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। আমরা এর বিরোধিতা করি।’
চীনের আরেক কর্মকর্তা ঝাও সিয়াওঝো বলেন, ‘চীন কী করবে, তা বলে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই ওয়াশিংটনের। চীনা সেনাবাহিনীতে আমরা যা করি, তা চীনের নিরাপত্তার স্বার্থ বজায় রেখে করা হয়।’
সিঙ্গাপুরের এ প্রতিরক্ষা সম্মেলনে আজ রোববার বক্তব্য দেবেন চীনের প্রতিরক্ষাপ্রধান লি। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে রুশ অস্ত্র কেনার অভিযোগে লির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পেন্টাগন জানায়, লির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অস্টিনের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় কোনো সমস্যা নেই।
ঝাও বলেন, অস্টিনের সঙ্গে বৈঠকের পূর্বশর্তই হচ্ছে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া।
অস্টিন বলেন, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংকট ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা করতে চীন ইচ্ছুক নয়, সেটি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে এ পরিস্থিতি শিগগিরই ঠিক হবে বলে তিনি আশাবাদী।
গত এপ্রিল মাসে তাইওয়ান ঘিরে তিন দিনের সামরিক মহড়া চালায় চীন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের বৈঠকের পর এ মহড়া চালায় চীন।
সিঙ্গাপুরের সম্মেলনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া আলাদা বৈঠক করেছে। তাতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের তথ্য বিনিময় করার বিষয়টি উঠে এসেছে।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে দেখা দিয়েছে টানাপোড়েন। এই পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বাড়াতে গোপন সফরে চীনে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস। বৈঠক করেছেন চীনা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে।