চীনের টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ (সিএনবিজি) বা সিনোফার্ম করোনার টিকা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। এর আগে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে টিকা উচ্চ কার্যকারিতা দেখিয়েছে।
সিনোফার্মের উপব্যবস্থাপক শি শেংগির বরাতে গত মঙ্গলবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, সিনোফার্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ দুটি করোনার টিকার জন্য আবেদন করেছে। সিএনবিজির অধীনে দুটি টিকা প্রস্তুতে কাজ করছে দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তারা টিকাটির কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখছে। দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ১০টি দেশে এ টিকার পরীক্ষা চলছে। এখনো অবশ্য সিনোফার্মের টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
সিএনবিজির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অবশ্য সিনহুয়া ফাইন্যান্সকে নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, টিকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করার জন্য এখনো কোনো আবেদন করা হয়নি। ওই প্রতিবেদন সঠিক নয়। টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় পাওয়া তথ্য এখনো পর্যালোচনা শেষ হয়নি। এ ব্যাপারে সিনোফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারক ফাইজার ও তাদের জার্মান সহযোগী বায়োএনটেকের একটি টিকা এবং আরেক প্রতিষ্ঠান মডার্নার একটি টিকার ফলাফল জেনেছে বিশ্ব। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে এসব টিকা প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করার কয়েক দিনের মধ্যেই চীনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে টিকা অনুমোদন চাওয়ার তথ্য জানা গেল।
গত সপ্তাহে ফাইজার তাদের টিকার ফল জানানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে টিকার জরুরি অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। মডার্নাও দ্রুত তাদের অনুসরণ করবে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি একটি টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন চাইছে।
এখন পর্যন্ত রাশিয়া একমাত্র দেশ যারা তাদের একটি টিকা সাধারণ ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে।
‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে ওষুধ নিয়ন্ত্রক ন্যাশনাল মেডিকেল প্রোডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গত জুলাই মাসে সিএনবিজির দুটি টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়। প্রাথমিক পরীক্ষার তথ্যের ভিত্তিতে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে ওই টিকা দেওয়া হয়। বিশেষ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১০ লাখ মানুষকে ওই টিকা দেওয়া হয়।
টিকার প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছিল, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই এটি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে, যা প্রতিরোধের একটি নির্দেশক। তবে টিকার অনুমোদন পেতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পর্যালোচনার জন্য জমা দিতে হবে।
টিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে যারা প্রথম দিকে কাজ শুরু করেছিল তার মধ্যে অন্যতম সিএনবিজি। তারাই প্রথম বিশ্বে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছিল। তারা তৃতীয় ধাপে ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা চালায়। দুই সপ্তাহ আগে সিনোফার্ম জানিয়েছিল, তাদের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এ-সংক্রান্ত সব তথ্য প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।
সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিংজেন টিকাটির নিরাপত্তার বিষয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, টিকাটির মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া আর কোনো বাজে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এটি বিদেশে পরীক্ষা শুরুর আগে ৫৬ হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাদের কারও করোনা হয়নি। টিকাটি বিদেশে ৮১ জন সিএনবিজির কর্মীকে দেওয়া হয়েছিল। তাদের কারও করোনা হয়নি। কিন্তু যে ১৮ জনকে দেওয়া হয়নি তাঁদের মধ্যে ১০ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।
চলতি বছরেই সিএনবিজির দুটি কারখানায় কোভিড-১৯-এর টিকা তৈরি হবে। এ বছর ১০ কোটি ডোজ টিকা তৈরির পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেছেন লিউ। আগামী বছর ১০০ কোটি ডোজ টিকা তৈরির সক্ষমতা তৈরির কথা বলেন সিনোফার্মের চেয়ারম্যান।