চীনের জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজনকে গণহারে আটকে রাখা ও তাঁদের ওপর নির্যাতনের খবরে দেশটির সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট। একই সঙ্গে হংকংসহ বিভিন্ন দেশে মৌলিক নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতায় আরোপ করা বিধিনিষেধগুলোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি।
মিশেল ব্যাশেলেটকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, উইঘুর মুসলিমদের বাছবিচারহীনভাবে আটক, নির্যাতন, যৌন সহিংসতা ও জোরপূর্বক কাজে খাটানো নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষ পর্যালোচনার প্রয়োজন। চীনে সফরে যাওয়া বিষয়ে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর সমঝোতায় আসার বিষয়েও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
যদিও এর আগে ২০১৯ সালের জুনে জেনেভায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত চেন সু জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক প্রধানকে জিনজিয়াং সফরে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সফর এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।
অধিকারকর্মী ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, জিনজিয়াংয়ের পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন ক্যাম্পে কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটক রাখা হয়েছে। চীন এসব ক্যাম্পের কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এগুলো আসলে প্রশিক্ষণকেন্দ্র। উগ্রবাদী মানসিকতা প্রশমনে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই চীনে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। দেশটির, বিশেষ করে জিনজিয়াং ইস্যুতে চীনের সমালোচনায় যুক্ত হলেন মিশেল ব্যাশেলেট। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা গণহত্যার শামিল। তবে এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডস সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডসই প্রথম, যারা উইঘুর ইস্যুতে কোনো প্রস্তাব পাস করল।
উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রও সোচ্চার হয়েছে। এসব সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন আবার বলেছে, এটি চীনের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। চীনর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সোমবার বলেন, সেখানে কখনোই ‘তথাকথিত গণহত্যা’ সংঘটিত হয়নি। কিংবা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোর করে কাজ করানো বা ধর্মকে ইস্যু করে নির্যাতনের মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি জিনজিয়াংয়ে।
তবে গতকাল শুক্রবার মানবাধিকার কাউন্সিলে মিশেল ব্যাশেলট বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা এবং করোনাভাইরাসের মহামারির নামে চীন জনগণের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। সেখানে মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, এমনকি বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেককে আটক করা হয়েছে, অনেকে ন্যায়বিচার পাননি।