বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি–৭–এর নেতাদের দেওয়া যৌথ বিবৃতি আজ সোমবার প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। বিবৃতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষত জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনসহ আরও কিছু ঘটনায় বেইজিংয়ের সমালোচনা করা হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
এ বিবৃতিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বড় ধরনের হস্তক্ষেপ বলে ক্ষোভ জানিয়ে জোটের নেতাদের তার বিরুদ্ধে ‘কুৎসা রটানো’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
ইংল্যান্ডে সদ্য সমাপ্ত জি–৭ শীর্ষ বৈঠকে গত শনিবার চীনবিষয়ক আলোচনা–বিতর্ক চলাকালে নেতারা জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর নির্যাতন ও দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত রাখা এবং তাইওয়ানসহ এ অঞ্চলে শান্তি–স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা। এ তিন ইস্যুই চীনের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে বিবেচনা করা হয়।
জি–৭ নেতারা ওই বিবৃতিতে জিনজিয়াং অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকারের বিষয়টিকে সম্মান দিতে এবং হংকংকে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন দিতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় লন্ডনে চীনের দূতাবাস বলেছে, জিনজিয়াং, হংকং ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হয়েছে, তাতে খুবই নাখোশ বেইজিং। এ বক্তব্য সরাসরি নাকচ করে চীন বলেছে, বিবৃতিতে প্রকৃত অবস্থার বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের অশুভ মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
চীন আরও বলেছে, বিশ্বজুড়ে এখনো করোনা মহামারি চলছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে মন্দা। এ অবস্থায় বিশ্বসম্প্রদায়ের উচিত, ক্ষমতার রাজনীতি প্রদর্শন করে বিভক্তি তৈরির পরিবর্তে সব দেশের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা।
জি–৭ এর বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করার এক দিন আগেই এ জোটের নেতাদের স্পষ্টভাবে সতর্ক করে চীন বলেছে, এমন একসময় ছিল, যখন কয়েকটি দেশের ছোট ছোট জোট বিশ্ববাসীর ভাগ্য নির্ধারণে সিদ্ধান্ত নিত। সে সময় অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। এ মন্তব্য চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রুখতে ধনী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে পরিচিত জি–৭–এর নেতাদের পিঠে আঘাত করার মতোই বলে মনে করা হচ্ছে।
ওই দিন লন্ডনে চীনা দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বৈশ্বিক সিদ্ধান্তগুলো কয়েকটি দেশের ছোট একটি জোটের মাধ্যমে গৃহীত হওয়ার সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, বড় বা ছোট, শক্তিশালী বা দুর্বল সব দেশ সমান। বৈশ্বিক বিষয়গুলোয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ সব দেশের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা ও পরামর্শের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।’
চীনের মুখপাত্র বলেন, গুটিকয় দেশের প্রণীত আইন নয়, বরং জাতিসংঘ নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত আন্তর্জাতিক নিয়মশৃঙ্খলা–ব্যবস্থাই হলো একমাত্র বৈধ বৈশ্বিক ব্যবস্থা।
জি–৭–এর সদস্যভুক্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও জাপানের নেতারা ইংল্যান্ডের সমুদ্রতীরবর্তী অবকাশ যাপনকেন্দ্র কারবিস বেতে শুক্রবার বৈঠকে সমবেত হন। ধনী গণতান্ত্রিক দেশগুলো বিশ্ববাসীকে চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার ভালো বিকল্প উপহার দিতে পারে—বৈঠকের মধ্য দিয়ে সেই ধারণা দিতে চেয়েছেন তাঁরা।
এ রকম চেষ্টার অংশ হিসেবে জি–৭ নেতারা বৈঠকে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডোজ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।