চীন বিশ্বজুড়ে নানা জিনিস রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে মানুষের চুল তাদের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। বেশ কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠান চুল রপ্তানি করে থাকে। এ শিল্পখাত এখন এতটাই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে যে একে ‘কালো স্বর্ণ’ বলা হচ্ছে। কিন্তু চীনের এই কালো স্বর্ণ সংগ্রহের ইতিহাস আরও কালো। দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রতীক এটি।
নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কালো স্বর্ণ বা মানুষের চুল রপ্তানিতে যুক্ত কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অভিযোগ, চীনের ভয়ংকর অভ্যন্তরীণ বন্দিশিবিরগুলোতে আটক জাতিগত সংখ্যালঘুদের চুল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চুলের উপযোগী বিভিন্ন পণ্যের শিল্পখাতটির বাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। খাতটি দখলে রেখেছেন এশিয়ার ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে চীনের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চীন থেকে যেসব চুল আসে, তার উৎপত্তিস্থল জিনজিয়াং প্রদেশ। ওই এলাকায় ২০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমের বসবাস। সেখানে অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুরাও বাস করে। ২০১৬ সাল থেকে তারা সেখানে একধরনের বন্দী জীবন যাপন করছেন।
কয়েক মাসের দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে সিএনএন বাণিজ্য তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাতে দেখা গেছে, ওই অঞ্চল থেকে চুলসহ চুলের উপযোগী নানা পণ্য বাজারে আসার হার বেড়েছে। জিনজিয়াংয়ের একটি শিল্প পার্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালে চুল রপ্তানি বাড়তে দেখা যায়। ওই অঞ্চলের আশপাশে চারটি বন্দিশিবির রয়েছে।
ওই ক্যাম্পের সাবেক বন্দীরা বলেছেন, বন্দিশিবিরে তাঁদের নির্যাতন করা হতো। তাঁদের ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এবং সীমান্ত সুরক্ষা দপ্তর এখন ওই অঞ্চল থেকে রপ্তানিকৃত চুল যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়া কথা বলেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই জোরপূর্বক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জিনজিয়াংয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিদ্বেষকমূলক প্রচার।
গত জুন মাসে নিউইয়র্কের ফেডারেল কর্তৃপক্ষ ১৩ টন চুলসহ অন্যান্য পণ্য আটক করে। তাদের অভিযোগ ছিল, চীনের বন্দিশিবিরে থাকা লোকজনের চুল থেকে এসব পণ্য তৈরি করা হয়েছে। ১৩ টন ওই পণ্যের দাম ৮ লাখ ডলারের বেশি হতে পারে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ অন্য সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বন্দিশিবিরের লোকজনকে দিয়ে মার্কিন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করানো হয়। এসব কারখানা ‘ব্ল্যাক ফ্যাক্টরি’ নামে পরিচিত।
চীনের পক্ষ থেকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বন্দী করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।