‘আসেন আসেন, খেয়ে যান, মজার খাবার এদিকে। শেষ হয়ে গেল, শেষ হয়ে গেল, এর আগেই নিয়ে যান…(ইংরেজি ভাষায়)।’ খাবারের দোকানের সামনে এমন হাঁকডাক ঢাকার ইফতারি বাজারের কথা মনে করিয়ে দেয়। আর এভাবেই বাহারি খাবার সাজিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির লাকেম্বায় চলছে ‘রমাদান নাইটস রিটার্ন’ উৎসব। উৎসবমুখর আয়োজনে ভিড় করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সিডনির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা লাকেম্বাকে অনেকে বলেন ‘বাঙালিপাড়া’। এই বাঙালিপাড়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের আধিক্যও রয়েছে। ৯ মার্চ শুরু হওয়া ‘রমাদান নাইটস রিটার্ন’ উৎসব চলবে রমজান মাসজুড়ে। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বসেছে জমজমাট ইফতারি বাজার। স্থানীয় খাবারের দোকান এবং বাইরের সড়কেও বসেছে বাহারি ইফতারির স্টল। আর ধর্মীয় উৎসবটির প্রতি সম্মান জানিয়ে লাকেম্বার প্রধান সড়কে বিকেল পাঁচটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছে স্থানীয় সিটি কাউন্সিল। সিডনির যেকোনো প্রান্ত থেকে এখানে যাতায়াতে সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া লাকেম্বার আশপাশের এলাকা থেকে ফ্রি শাটল বাস শুধু এই আয়োজনস্থলে চলাচল করছে। আয়োজনে ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষার নির্দেশ রয়েছে সিটি কাউন্সিলের।
সন্ধ্যা নামতেই ভিড় বাড়তে থাকে লাকেম্বায়। এখানকার দোকানে লেবানন, তুরস্ক, ইরানিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশের খাবারের চাহিদা একটু বেশি। এখানকার খাবারের মধ্যে রয়েছে উটের বার্গার, রুটি ও শিক কাবাব, সিরিয়ান আইসক্রিম, মোগলাই মুরতাবাক, মধ্যপ্রাচ্যের মিষ্টান্ন কুনাফেহ, ভারতীয় কাবাব শর্মা, কাশ্মীরের চা, তুর্কি কফি, আলুর টর্নেডো চিপস, ফলের শরবত ইত্যাদি। রয়েছে বাংলাদেশি দোকানও, যেখানে পেঁয়াজু, ছোলা, বেগুনি, ঘুগনি, আলুর চপ, জালি কাবাব, হালিম, বিভিন্ন রকম বেসনে ভাজা খাবার, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ও বিভিন্ন রকম মিষ্টি। জনপ্রতি একজনের ইফতার করতে খরচ হয় ২০ থেকে ৪০ অস্ট্রেলীয় ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা।
গত বছর প্রায় ১৩ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছিল এই উৎসবে। এবার সব মিলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা আয়োজকদের। উৎসবে খাবারের স্টল দিয়েছেন স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন। তিনি বললেন, ‘লাকেম্বার এই ইফতারি বাজার বহুসংস্কৃতির মানুষের একটি মিলনমেলা। এখানে ব্যবসা করে লাভ করার চেয়ে বাংলাদেশের যুক্ততাকে প্রাধান্য দিয়েছি আমি। পাশাপাশি বেশ কিছু শিক্ষার্থীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’
প্রথমবারের মতো লাকেম্বার এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি আরিশা আক্তার। তিনি বলেন, ‘অনেকের কাছে লাকেম্বার বিশাল ইফতারি আয়োজনের কথা শুনেছি। এবার এখানে এসে দেখি এ তো এলাহি কাণ্ড। ইফতারের আগে ভিড় জমিয়ে ইফতারি কেনা, দোকানিদের ডাকাডাকি সবই দেখেছি এখানে।’
রোজার বিশেষ ইফতারির স্বাদ নিতে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা নিক এটাস। তিনি বললেন, ‘কয়েক বছর আগে আমার এক মুসলিম বন্ধুর সঙ্গে এখানে এসেছিলাম। তখন থেকেই ইফতারের খাবারের ভক্ত আমি। এ রকম মজাদার খাবার বছরের অন্যান্য সময় পাওয়া যায় না।’ নিক জানালেন, তিনি বাংলাদেশি দোকানের খাবারও খেয়েছেন। ভালো লেগেছে।