ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে অব্যাহত জাতিগত দাঙ্গায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রস্তাব গ্রহণ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। ওই প্রস্তাব যাতে আলোচিত বা গৃহীত না হয়, সে জন্য ভারত চেষ্টার অন্ত রাখেনি। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ইইউ পার্লামেন্টে সেই প্রস্তাব পাস হয়েছে।
প্রস্তাব পাসের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। ভারতের কাছে এটা অগ্রহণযোগ্য। এর মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক মানসিকতা প্রতিফলিত হয়েছে।
ইইউর প্রস্তাবে ভারত সরকারকে সহিংসতা বন্ধ এবং সংখ্যালঘু খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রাণ ও সম্পত্তি রক্ষা করতে সচেষ্ট হতে বলা হয়েছে। পাঁচটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী পার্লামেন্টের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য পেশ করেছিল। সদস্যদের কণ্ঠ ভোটে তা গৃহীত হয়। ঠিক ওই সময় রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবতরণ করছেন। নিঃসন্দেহে ওই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী মোদির পক্ষে বিড়ম্বনার। ফ্রান্স শুধু ইইউর গুরুত্বপূর্ণ সদস্যই নয়, পার্লামেন্টও অবস্থিত দেশটির স্ট্রাসবুর্গ শহরে।
প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রস্তাবের কথা স্বীকার করে তখনই তিনি বলেছিলেন, বিষয়টি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ। প্রস্তাব বন্ধে লবিস্ট নিয়োগ সম্পর্কে মন্তব্য না করে তিনি বলেছিলেন, ভারতের বক্তব্য সদস্যদের কাছে জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বিচার বিভাগসহ ভারতের সর্বস্তরীয় কর্তৃপক্ষ মণিপুর পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে সবাই সচেষ্ট। তিনি বলেন, মণিপুরের দিকে না তাকিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বরং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে কার্যকর আলোচনা করুক।
যে পাঁচটি দল ও গোষ্ঠী মণিপুর-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে, পার্লামেন্টের ৭০৫ সদস্যের মধ্যে তাদের সংখ্যা ৮০ শতাংশ। দুই মাস ধরে চলা জাতিগত দাঙ্গায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ১২০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। ১ হাজার ৭০০-এর বেশি ঘরবাড়ি, ২৫০টি গির্জা ও বেশ কিছু মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
ইইউর প্রস্তাবে রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলা হয়, তাঁদের অবিলম্বে জ্বালাময়ী ভাষণ বন্ধ করে মানুষের আস্থা ও ভরসা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত। প্রস্তাবে বলা হয়, যাঁরা সরকারের সমালোচনা করছেন, তাঁদের অপরাধী ভাবা ঠিক হবে না।
প্রস্তাবে এ-ও বলা হয়, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভাজনের নীতি নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মণিপুরে হিংসা ছড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরাও নিরপেক্ষতা দেখাননি। তাতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে।
মণিপুরের শাসক দল বিজেপি। কেন্দ্রেও বিজেপির সরকার। রাজ্যে হিন্দু সংখ্যাগুরু মেইতি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে হানাহানি চলছে। এর প্রভাব পড়েছে পাশের মিজোরাম রাজ্যেও। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই সহিংসতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনো একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি।