৮১ বছর বয়সে ৮০ দিনে দুই বান্ধবীর বিশ্বভ্রমণ

টেক্সাসের ৮১ বছর বয়সী এই দুই বান্ধবী ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণ করেন
ছবি: টুইটার

দুই বান্ধবী প্রমাণ করলেন, রোমাঞ্চকর ভ্রমণে বয়স কোনো বাধা নয়। এমনকি বয়স ৮১ হলেও। টেক্সাসের আলোকচিত্রী ইলি হামবি ও চিকিৎসক–প্রভাষক স্যান্ডি হেজলিপ ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণ করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে মিসরের মরুভূমিতে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ উপভোগ করেছেন তাঁরা।

দুই বান্ধবী ব্যবহার করেন এমন একটি ব্লগ থেকে জানা যায়, অশীতিপর এই দুই বান্ধবী গত ১১ জানুয়ারি বিশ্বভ্রমণে বের হন। প্রথমই তাঁরা এমন জায়গায় যান, যা যেকোনো পর্যটকের জন্যই লোভনীয় বটে। হ্যাঁ, প্রথমে তাঁরা যান অ্যান্টার্টিকায়।

সবচেয়ে দক্ষিণের এই মহাদেশে যেতে হলে ড্রেক প্যাসেজ পার হতে হয়। লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও অ্যান্টার্টিকার সাউথ শেটল্যান্ড আইল্যান্ডসের মধ্যে তীব্র খরস্রোতা এই করিডরের অবস্থান।

হামবি বলেন, ‘বিরূপ অবস্থার মধ্যে খরস্রোতা করিডর পার হতে আমাদের দুই দিন লেগেছিল। অবস্থা এমন ছিল যে মনে হচ্ছিল, জীবনকে হাতে নিয়ে আমার পার হয়েছি। স্রেফ বুনো সময় পার করেছি আমরা।’

সে সময়ের অবস্থা স্মরণ করে হামবি বলতে থাকেন, ‘তবে আমরা যখন অ্যান্টার্টিকার মাটিতে পা রেখেছি, তখনই সেই দুঃস্বপ্নের দুই দিনের কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। অ্যান্টার্টিকার সৌন্দর্য অবিশ্বাস্য। পেঙ্গুইন, হিমশৈল, হিমবাহ—সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ!’

বিশ্বভ্রমণের শুরুতে দুই বান্ধবী ঘুরে দেখেন অ্যান্টার্টিকা

সেই অ্যান্টার্টিকার বিপৎসংকুল যাত্রা থেকে শুরু করে ৭টি মহাদেশের ১৮টি দেশ ঘুরেছেন এই দুই বান্ধবী। প্রায়ই তাঁরা দুজনে একই রকম টি–শার্ট পরতেন। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক—সব সামাজিক মাধ্যমে তাঁরা অনুসারীদের সীমাহীন ভালোবাসা পেয়েছেন।

স্যান্ডি বলেন, ১৯৯৭ সালে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর হামবির সঙ্গে তাঁর দেখা হয় ‘জাম্মিয়া মেডিকেল মিশনে’। হামবি ও তাঁর স্বামী এই মিশন পরিচালনা করতেন।

এই মিশনে হামবি ও স্যান্ডির মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে দেয়। তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে নিজেদের ভ্রমণের আগ্রহের কথা বলতেন। ২০০৫ সালে হামবির স্বামীর মৃত্যুর পর দুজনের বন্ধুত্ব আরও পোক্ত হয়।

স্যান্ডি বলেন, দুজনের বয়স ৮০ বছর পার হওয়ার কিছু আগে তাঁদের বিশ্বভ্রমণের কথা মাথায় আসে। যেই চিন্তা সেই কাজ।

স্যান্ডি বলেন, ‘চিন্তাটা মাথায় আসার আরেকটা কারণ হতে পারে, আমরা দুজন একসঙ্গে অনেক দেশ ঘুরেছি। আমাদের বয়স ৮০ বছর হওয়ার প্রায় ৪ বছর আগে একদিন আমি হামবিকে বললাম, আমরা ৮০ বছর বয়সে কি ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণের মতো বিষয়টি উপভোগ করতে পারি না?’

হামবি ও স্যান্ডি তাঁদের ওয়েবসাইটে লেখেন, তাঁরা এই ভ্রমণকে তাঁদের স্বামী কেলি ও ডনকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা লেখেন, ‘আমরা তোমাদের মিস করছি। আহা! যদি আমাদের এই রোমাঞ্চকর ভ্রমণে তোমরা যোগ দিতে পারতে!’

স্যান্ডি বলেন, ৮০ বছর বয়সে পা রাখার পর ২০২২ সালে তাঁরা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। এর আগে কোভিড–১৯–এর কারণে সময়মতো তাঁরা পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারেননি। তবে কোভিড তাঁদের একেবারে থামিয়ে দিতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘এ কারণে আমরা এই বছর বের হয়েছি। আমাদের বিশ্বভ্রমণের প্রতিপাদ্য “৮১ বছর এবং এখনো ছুটে বেড়াচ্ছি”।’

গত তিন মাসে এই দুই বান্ধবী মিসরে উটের পিঠে চড়েছেন, বালিতে হাতির দেখা পেয়েছেন, নেপালে নেচেছেন, ফিনল্যান্ডে নর্দান লাইট পর্যবেক্ষণ করেছেন। বিশ্বভ্রমণে নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই তাঁরা ভ্রমণ শেষ করেছেন।

হামবি বলেন, ‘আমরা দুজনই স্বাধীন ও জেদি প্রকৃতির। তবে আমরা সব সময় একে অন্যকে সুযোগ দিই। আমরা একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করি। আমরা জানি, আমরা যা করছি, সেটিই ঠিক। আমাদের একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধাবোধ আছে।’

মানুষকে যেভাবে দেখেছেন হামবি

হামবি বলছিলেন, ‘আমরা যা কিছু দেখেছি, তার সবকিছুই উপভোগ করেছি। তবে আমাদের কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সেসব মানুষ, ভ্রমণের সময়ে যাঁদের সঙ্গে আমরা মিশেছি। আমরা ভ্রমণকালে দুনিয়ার কিছু দারুণ, উদার ও বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি। আমাদের এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে এমন কিছু বন্ধু রয়েছেন, যাঁদের আমরা সত্যিই ভালোবাসি।’

মিসরে উটের পিঠে এক বান্ধবী

হামবি বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি, আমরা যখন বিশ্বভ্রমণ শুরু করি, তখন আমাদের অবকাশের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমরা এক রোমাঞ্চের পরিকল্পনা করেছিলাম। আমাদের প্রতিটি দিন ছিল রোমাঞ্চে ভরা।’

হামবি ও স্যান্ডি বিশ্বভ্রমণ শেষে টেক্সাসের বাড়িতে ফিরেছেন। দুজনই আবার পরবর্তী বিশ্বভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করেছেন। যেকোনো পর্যটকের জন্য তাঁরা একটি পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেকে ভ্রমণে গিয়ে ভাষা নিয়ে খুব চিন্তায় থাকেন। তবে এটা কোনো সমস্যাই নয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

হামবি বলেন, ‘মানুষ আমাদের অনেক সময় ভাষা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত। আমরা কীভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলতাম। আমাদের ভাষা ছিল একটাই, সেটি হচ্ছে হাসি। আমরা দেখেছি, এটিই সবচেয়ে দারুণ কাজ করেছে। কারণ, আমরা দেখেছি, সব মানুষ ইংরেজি ভাষা জানে না। কিন্তু একটি হাসি সব বলে দেয়।’

দুই বান্ধবী বয়স্ক পর্যটকদের উৎসাহ জোগাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, বয়সের ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন বালিতে মোটরসাইকেলে চড়া যাবে না। কারণ, পড়ে আঘাত পাওয়ার শঙ্কা আছে। তাঁরা বলছেন, বিশ্বভ্রমণের পরিকল্পনায় বয়স তাঁদের জন্য বাধা হতে পারেনি।

স্যান্ডি বলেন, ‘৮১ বছর বয়স ভ্রমণে যাওয়ার জন্য “উপযুক্ত বয়স”।’ তিনি বলেন, ‘এমন পরিপক্ব বয়স বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। আমি মনে করি, এই বয়সে আমি সৌন্দর্যের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারি। আমার কাছে ভ্রমণে যাওয়ার এটিই উপযুক্ত বয়স। আমি কৃতজ্ঞ।’