উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি

উত্তর কোরিয়া ও ইরানের মধ্যে কি জোট হচ্ছে

উত্তর কোরিয়া এখন রাশিয়া ও চীনের বাইরে সমমনোভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। সম্প্রতি পিয়ংইয়ং ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের নজর পড়েছে ইরানের ওপর।

সিউলে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়া স্টাডিসের অধ্যাপক কিম সুং কিয়ুং বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য ও ইরানের পাশে দাঁড়ানোর একটা ভালো সুযোগ তাদের সামনে এসেছে।

অধ্যাপক কিম সুং কিয়ুং আরও বলেন, উত্তর কোরিয়া মনে করছে, তেহরানের কাছে অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি বিক্রি করার একটা সুযোগ তাদের সামনে এসেছে। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। এর মধ্যেই কিছুটা আর্থিক সুবিধা পেতে চাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।

গত এপ্রিলে তেহরানে একটি উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। ২০১৯ সালের পর ইরানে এই ধরনের প্রতিনিধিদল পাঠাল তারা। তবে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না, তা নিয়ে দুই দেশই মুখ বন্ধ রেখেছে। তবে সামরিক প্রযুক্তি, পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কথা হয়েছে বলে জল্পনা চলছে।

ইরানের অস্বীকার

ইরান জানিয়েছে, পরমাণু প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, বিদেশি মিডিয়া পক্ষপাতমূলক জল্পনা করছে। এর কোনো সত্যতা নেই।

অপর দিকে উত্তর কোরিয়া বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা ঠিক নয়। তেহরানের দেওয়া ড্রোন ব্যবহার করে মস্কো ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

ট্রয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিউল ক্যাম্পাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড্যানিয়েল পিংকস্টন বলেছেন, তেহরান ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা আপাতবিরোধী। ইরান হলো ধর্মতান্ত্রিক ইসলামিক দেশ এবং উত্তর কোরিয়া হলো এক নেতাভিত্তিক কমিউনিস্ট দেশ।

তবে অধ্যাপক ড্যানিয়েলের মতে, দুই দেশ যেমন একদিকে খুবই আলাদা, অন্যদিকে তাদের মিলও আছে। দুই জায়গাতেই কর্তৃত্ববাদী শাসন রয়েছে। দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী।

উত্তর কোরিয়া কেন ইরানকে গুরুত্ব দিচ্ছে

উত্তর কোরিয়া এখন রাশিয়া, চীন, সিরিয়া ও বেলারুশের পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চাচ্ছে। পাশাপাশি তারা একের পর এক দেশে তাদের দূতাবাস বন্ধ করছে। তারা এখন সেসব দেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যারা সামরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে তাদের সাহায্য করবে।

অধ্যাপক ড্যানিয়েল পিংকস্টন মনে করেন, ইরান ও উত্তর কোরিয়া আরও ঘনিষ্ঠ হবে। তারা একে অন্যকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাহায্য করবে। অতীতে ইরানকে পরমাণু প্রযুক্তি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। যার ফলে ইসরায়েল ক্ষুব্ধ হয়েছে। এখন উত্তর কোরিয়া নিজেরা যেসব অস্ত্র তৈরি করেছে, তা ইরানকে দিতে পারে। পরমাণু পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্যও তারা ইরানকে দিতে পারে। এমনকি তারা মহাকাশ প্রযুক্তিও দিতে পারে ইরানকে।

দুই দেশই ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে উৎসাহী। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনকে আরও কার্যকর অস্ত্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়।

এ ছাড়া ইরান থেকে তেল পাওয়াটাও উত্তর কোরিয়ার কাছে খুব জরুরি। রাশিয়ার মাধ্যমে এই তেল উত্তর কোরিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে ইরান।