করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো দারিদ্র্য দূরীকরণের লড়াইয়ে অন্তত দুই বছর পিছিয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্য অনেক দেশের জন্য দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের হয়ে যাওয়া বেশ কঠিন করেছে এই মহামারি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পক্ষ থেকে আজ বুধবার এ কথা জানানো হয়।
যাঁদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম, তাঁরা অতিদরিদ্র। মহামারি না হলে ২০২০ সালে এই অঞ্চলে এমন মানুষের সংখ্যা ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমত। কিন্তু মহামারিতে অতিদরিদ্র উল্টো ৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর বেড়েছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এই বছর সেটা ৩ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ম্যানিলাভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে ১ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এডিবি বলেছে, ২০২১ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ হয় অতি বা মাঝারি দরিদ্র ছিলেন। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে তা অর্ধেকে কমতে পারে যদি সরকারগুলো আরও সুষম অর্থনৈতিক সুযোগ এবং বৃহত্তর সামাজিক গতিশীলতার জন্য সহনশীল, উদ্ভাবন ও অন্তর্ভুক্তির দিকে মনোনিবেশ করে।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ আলবার্ট পার্ক বলেন, করোনার অভিঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গরিব ও অসহায় মানুষেরা। মহামারির প্রভাব কাটিয়ে এখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু অনেকে দেখছেন, দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের হয়ে আসাটা তাঁদের জন্য মহামারির আগের চেয়েও বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে।
এডিবি বলছে, মহামারির বড় প্রভাব পড়েছে শিক্ষায়। এতে অনেক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এসব অনিশ্চয়তায় দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থান বদলানোর যে সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল, তা কমেছে। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বিবেচনায় এই অঞ্চলের মাত্র অর্ধেক দেশ মহামারির আগের অবস্থানে ফিরতে পেরেছে। কিন্তু করোনার নতুন নতুন ধরনের সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এখনো নাজুক।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে কিছু ঝুঁকি আরও বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে আছে কর্মসংস্থান বা চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, সাইবার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া ও সংক্রামক রোগের নতুন নতুন প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া।