মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সফর

তাইওয়ান ঘিরে আবার উত্তেজনা

প্রতীকী ছবি
ছবি: রয়টার্সের ইলাস্ট্রেশন

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে চলতি মাসের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছিল। এর জেরে তাইওয়ান ঘিরে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায় বেইজিং। উত্তেজনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তাইওয়ান প্রণালি। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের একটি দলের তাইওয়ান সফর ঘিরে আজ সোমবার সেখানে আবারও সামরিক মহড়া চালিয়েছে বেইজিং। তবে তাইওয়ান বলেছে, তারা পরিস্থিতি শান্ত চায়।

গতকার রোববার তাইওয়ানে পৌঁছানো মার্কিন আইনপ্রণেতাদের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সিনেটর এড মার্কে। তাঁরা তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে আজ দেখা করেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দুই পক্ষের আলোচনার সুযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছে তাইওয়ানের মার্কিন দূতাবাস।

মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সফরের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। নতুন করে সামরিক মহড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চীনের সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের মুখপাত্র শি ই এক বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, তাইওয়ান প্রণালিজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান। রাজনৈতিক কূটকৌশলও খাটাচ্ছে তারা। এই সামরিক মহড়া তারই একটি জবাব।

‘এক চীন’ নীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে ভুল পথে আর না এগোনোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বেইজিং। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক আরও তলানিতে না নিয়ে যাওয়ার এবং তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় প্রয়োজন হলে চীন শক্ত পদক্ষেপ নেবে বলেও জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েবিন।

এর আগে চীনের হুমকিধমকির পরও ২ আগস্ট তাইওয়ান সফরে যান ন্যান্সি পেলোসি। তাঁর সফর ঘিরে এ অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। তাইওয়ানের চারপাশে কয়েক দিন ধরে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালায় চীন। মোতায়েন করা হয় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র। ১৯৯৬ সালের পর এটাই ছিল চীনের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া। পেলোসি ও তাঁর পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে চীন। অবশ্য তাইওয়ানের দাবি, সামরিক মহড়া শুরুর পেছনে পেলোসির সফরকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে চীন।

চীনের বর্তমানে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি কখনো তাইওয়ান শাসন করেনি। এরপরও তারা তাইওয়ানকে চীনের ভূখণ্ড বলে মনে করে। এই দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রয়োজন হলে সামরিক শক্তি খাটানোর হুমকিও দিয়ে আসছে তারা।

কয়েক দশক ধরে এই হুমকি মুখে মুখে থাকলেও গত সপ্তাহে তা প্রথমবারের মতো লিখিত আকারে প্রকাশ পায়। চীনের তাইওয়ানবিষয়ক কার্যালয় থেকে জানানো হয়, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে শক্তি খাটানোয় পিছপা হবে না তারা। তবে এ-ও বলা হয় যে বিচ্ছিন্নতাবাদী অথবা বাইরের কোনো শক্তির উসকানি যদি চরম সীমা অতিক্রম করে, তাহলেই কেবল বাধ্য হয়ে এমন কঠিন পদক্ষেপ নেবে চীন।

বেইজিংয়ের এমন হুমকির মুখে অবশ্য শক্ত অবস্থানে রয়েছে তাইপেও। আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ জানিয়েছেন, মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সফর এটাই তুলে ধরেছে যে চীনের হুমকিকে ভয় পায় না তাইওয়ান। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক তাইওয়ান কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে আর কাদের কাছ থেকে সমর্থন নেবে, তা নিয়ে ‘কর্তৃত্বপরায়ণ’ চীন ছড়ি ঘোরাতে পারে না।

দুই দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৯৭ সালে তাইওয়ান সফর করেন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার নিউটন গ্রিনউইচ। এর পরই ন্যান্সি পেলোসি সফর করেন সেখানে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরকারের আমলে মার্কিন কর্মকর্তাদের তাইওয়ান সফর বেড়েছে।

১৯৭৯ সালে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্ক তাইপে থেকে বেইজিংমুখী হয়। এর পরও অনানুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক বোঝাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র চায় না যে তাইওয়ান স্বাধীনতার ঘোষণা দিক। আবার দ্বীপটির ওপর চীনা খবরদারির বিরোধীও তারা। সেই কারণে তাইওয়ানকে সামরিকসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চীন যদি তাইওয়ানে হামলা চালায়, তখন সামরিক সহায়তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাইপের পাশে দাঁড়াবে কি না, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়ে গেছে।