এসডব্লিউআরডি বন্দরনায়েকে যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন শ্রীলঙ্কা পরিচিত ছিল সিংহল নামে। তাঁকে হত্যা করা হয় জনসমক্ষে। হত্যাকারী ছিলেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু
এসডব্লিউআরডি বন্দরনায়েকে যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন শ্রীলঙ্কা পরিচিত ছিল সিংহল নামে। তাঁকে হত্যা করা হয় জনসমক্ষে। হত্যাকারী ছিলেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু

জনপ্রিয় এক প্রধানমন্ত্রী যখন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার

৬৫ বছর আগে এসডব্লিউআরডি বন্দরনায়েকে যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন শ্রীলঙ্কা পরিচিত ছিল সিংহল নামে। এসডব্লিউআরডি বন্দরনায়েকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর কাছে জনগণের অবাধে যাতায়াত ছিল। আর এই সুযোগেই তাঁকে হত্যা করা হয় জনসমক্ষে। হত্যাকারী ছিলেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু। রক্তাক্ত অবস্থাতেও বন্দরনায়েকে বলেছিলেন হত্যাচেষ্টাকারী ওই ভিক্ষুর কোনো ক্ষতি না করতে। এক সেপ্টেম্বর মাসেই এমন হত্যাকাণ্ড ঘটে। কী কারণে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, কীভাবে ঘটেছিল চলুন ফিরে দেখা যাক

এই তো কদিন আগে শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। এর আগে আরও অনেকে শ্রীলঙ্কার মসনদে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ ছিলেন আলোচিত, কেউবা বিতর্কিত। বন্দরনায়েকে পরিবারের মধ্যে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার কথা অনেকেরই মনে আছে। তাঁর মা সিরিমাভো বন্দরনায়েকে ছিলেন বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। আর তাঁর বাবা সলোমন ওয়েস্ট রিজওয়ে ডায়াস (এসডব্লিউআরডি) বন্দরনায়েকে যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন শ্রীলঙ্কা পরিচিত ছিল সিংহল নামে। তাঁকে হত্যা করা হয় জনসমক্ষে। হত্যাকারী ছিলেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু।

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৫৬ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচন ছিল আলোচিত ঘটনা। ১৯৪৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) পরাজিত হয়। এসডব্লিউআরডি বন্দরনায়েকের দ্য শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (ইউএনপি) ও মহাজানা একসাথ পেরামুনার (এমইপি) জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। বন্দরনায়েকে সিংহলের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

বন্দরনায়েকের পক্ষে যাঁরা নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন, তাঁরা ছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও শিক্ষক। বলা হতো, বন্দরনায়েকেকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন ‘সাঙ্গা, বেদা ও গুরা’। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো, যিনি বন্দরনায়েকের হত্যাকারী, তিনি ছিলেন তাঁদেরই সম্মিলিত ব্যক্তিত্ব। বলা যেতে পারে ‘থ্রি ইন ওয়ান’। বন্দরনায়েকের হত্যাকারী সোমারামা ছিলেন ভিক্ষু, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও আয়ুর্বেদিক কলেজের শিক্ষক।

ডাকের অপেক্ষায় ছিলেন হত্যাকারী

এসডব্লিউআরডি বন্দরনায়েকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর কাছে জনগণের অবাধে যাতায়াত ছিল। কড়া নিরাপত্তা নিতেও রাজি ছিলেন না জনপ্রিয় এই নেতা। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন কেবল একজন পুলিশ সার্জেন্ট। সেই সকালে সেই সার্জেন্টও দায়িত্বে ছিলেন না। বন্দরনায়েকের বাসভবনের ফটকে কেবল একজন পুলিশ সদস্য ছিলেন।

বন্দরনায়েকে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালাতেন দুই জায়গায়। হোরাগোল্লা ওয়ালাউয়ার পৈতৃক জমিদারি কার্যালয়ে তিনি বসতেন। আবার ৬৫ নম্বর রোজমেড প্লেসে ব্যক্তিগত বাসভবন ‘টিনটাজেল’-এ বসতেন। আর সেখানেই ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯ সালে তাঁকে গুলি করা হয়।

সেদিন টিনটাজেলের বারান্দার সামনে বসে ছিলেন বন্দরনায়েকে। সাক্ষাৎকারীদের একদল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের ভেতরে গিয়েছিল। আরেক দল বাইরে অপেক্ষায় ছিল। বাইরে অপেক্ষারতদের একজন ছিলেন ভেন. টালডুওয়ে সোমারামা থেরো। তাঁর পরনে ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুর পোশাক। জানিয়েছিলেন, আয়ুর্বেদ কলেজের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বন্দরনায়েকের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। থেরো বলেছিলেন, তিনি সরকারি আয়ুর্বেদ কলেজের শিক্ষক । বোরেলাতে তাঁর চোখের চিকিৎসার জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে।

নাম ডাকার সঙ্গে সঙ্গে অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলেন। একসময় ডাক পড়ে সোমারামার।

বলা হতো, বন্দরনায়েকেকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন ‘সাঙ্গা, বেদা ও গুরা’। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো, যিনি বন্দরনায়েকের হত্যাকারী, তিনি ছিলেন তাঁদেরই সম্মিলিত ব্যক্তিত্ব। বলা যেতে পারে ‘থ্রি ইন ওয়ান’।

পোশাকে লুকানো পিস্তল বের করেন সোমারামা

সোমারামা বন্দরনায়েকের বাসভবনের বারান্দার কোণে একটি চেয়ারে বসে ছিলেন। তিনি তাঁর বাঁ পাশে রাখা নিচু একটি টুলের ওপর একটি ফাইল রেখেছিলেন। রাখা ছিল একটি রুমালও। তাঁর ডান পাশের আসনে আরও একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু বসে ছিলেন। তিনি পোলোনারুওয়া থেকে এসেছিলেন। তাঁর নাম ছিল আনন্দ থেরো। কৃষি বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি বন্দরনায়েকের কাছে এসেছিলেন। পরে এই আনন্দ থেরোই প্রধানমন্ত্রী হত্যার বিচারের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়ে ওঠেন।

ডাকামাত্র সোমারামা উঠে দাঁড়ান। প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েকেও প্রথা অনুযায়ী নিচু হয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে সম্মান জানান। এরপর জানতে চান, তিনি সোমারামার জন্য কী করতে পারেন। আনন্দ থেরোর বর্ণনায় পরে জানা গেছে, সে সময় সোমারামাকে চিন্তিত দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, আয়ুর্বেদ কলেজে সুনির্দিষ্ট কিছু উন্নয়ন প্রয়োজন। বন্দরনায়েকে উত্তরে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে তাঁর দাবিগুলো লিখিতভাবে দিতে বলেন। সেটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ পি জয়াসুরিয়াকে দেবেন বলেও জানান।

ঘড়িতে তখন সকাল পৌনে ১০টা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা শোনার পর সোমারামা বসে পড়েন। পাশের টুলে থাকা ফাইলটি নিয়ে ঝাঁকি দিতে থাকেন। দেখে মনে হয়, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাগজপত্র দিতে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীও ভেবেছিলেন, সেই ফাইলে কাগজপত্র রয়েছে। তিনি সেগুলো নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময়ই ঘটে সেই ভয়াবহ ঘটনা। বৌদ্ধ ভিক্ষু পোশাকে লুকিয়ে রাখা পিস্তলটি বাইরে বের করেন।

হতবাক আনন্দ থেরো তাঁর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। উঠে দাঁড়ান উত্তেজিত সোমারামাও। এবার তিনি বন্দুক তাক করেন আনন্দ থেরোর দিকে। ভয়ে আনন্দ থেরো চিৎকার করে তাঁর মাকে ডেকে ওঠেন।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই চলে গুলি

এক জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন এসডব্লিউআরডি বন্দরনায়েকে

পুরো ঘটনা ঘটে যায় সিনেমার মতো। মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। বন্দরনায়েকের বুকে ও পেটে দুবার গুলি করেন সোমারামা। চিৎকার করে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। হাঁপাতে হাঁপাতে কষ্ট করে ঘরের ভেতরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

হতবাক আনন্দ থেরো তাঁর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। উঠে দাঁড়ান উত্তেজিত সোমারামাও। এবার তিনি বন্দুক তাক করেন আনন্দ থেরোর দিকে। ভয়ে আনন্দ থেরো চিৎকার করে তাঁর মাকে ডেকে ওঠেন। সোমারামা এবার ঘুরে যান। প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েকের পিছু নেন। তাঁকে আরও গুলি করতে থাকেন। আরও চারটি গুলি করে ম্যাগাজিন ফাঁকা করে ফেলেন সোমারামা। একটি গুলি প্রধানমন্ত্রীর হাতে লাগে। আরেকটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসা স্কুলশিক্ষক গুনারত্নের গায়ে লাগে। তৃতীয় গুলিটি দরজার কাচে গিয়ে লাগে। আর চতুর্থ গুলিটি লেগে ফুলদানি ভেঙে যায়।

এ সময় বারান্দায় থাকা লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। আনন্দ থেরো দৌড়ে পুলিশের কাছে যান। গুলির শব্দ শোনার পর ফটকে থাকা এক পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন। পুলিশের গুলি সোমারামার ঊরুতে লাগে।

কী ঘটেছিল, তা বুঝতে বুঝতেই কিছুটা সময় চলে যায়। সবাই সোমারামাকে ঘিরে ধরেন। সে সময় সোমারামা চিৎকার করে যাচ্ছিলেন। বলছিলেন, দেশ, ধর্ম ও জাতির স্বার্থে তিনি বন্দরনায়েকেকে গুলি করেছেন। এরপর সোমারামাকে আটক করা হয়। উত্তেজিত জনতা হয়তো তাঁকে মেরে ফেলত। তবে বন্দরনায়েকে আহত অবস্থায়ও তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছিলেন।

রক্তাক্ত বন্দরনায়েকে বলেন, সোমারামার ক্ষতি না করতে

এসডব্লিউআরডি বন্দরনায়েকে

রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকা বন্দরনায়েকে বলেছিলেন কোনো অবস্থাতেই বৌদ্ধ ভিক্ষুর কোনো ক্ষতি না করতে। কড়া নিরাপত্তায় সোমারামাকে হারবার পুলিশ স্টেশনে নেওয়া হয়। বন্দরনায়েকেকে বোরেলা জেনারেল হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাঁকে অস্ত্রোপচারকক্ষে নেওয়া হয়। পাঁচ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে বন্দরনায়েকের। জ্ঞান ফেরার পর তিনি ছিলেন উৎফুল্ল। চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে মজাও করেন তিনি। হাসপাতাল থেকে জাতির উদ্দেশে বার্তা দেন। সেই বার্তায় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে হত্যার চেষ্টাকারী ওই ব্যক্তির প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ না হতে আহ্বান জানান। তিনি তাঁকে বৌদ্ধ ভিক্ষুর বদলে ভিক্ষুর পোশাক পরিহিত বোকা ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেন। পরদিন ভোরের দিকে বন্দরনায়েকের অবস্থার অবনতি হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ২২ ঘণ্টা পর ১৯৫৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

হাসপাতাল থেকে জাতির উদ্দেশে বার্তা দেন। সেই বার্তায় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে হত্যার চেষ্টাকারী ওই ব্যক্তির প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ না হতে আহ্বান জানান।

ছুটে এলেন গভর্নর জেনারেল

যখন বন্দরনায়েকেকে হত্যাচেষ্টার খবর জানাজানি হয়, তখন পার্লামেন্টে অধিবেশন চলছিল। সে সময়ের শিক্ষামন্ত্রী ড. ডব্লিউ দহনায়েকে অধিবেশন মুলতবি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্য তাতে অসম্মতি জানান। বিরোধী নেতা ড. এন এম পেরেরা বলে ওঠেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ঠিক সে সময়ই তখনকার গভর্নর জেনারেল স্যার অলিভার গুনেতিলেকে ইতালীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। গুলির খবরে তিনি ছুটে যান বন্দরনায়েকের বাসভবনে। রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ এই ব্যক্তি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন।

রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকা বন্দরনায়েকে বলেছিলেন কোনো অবস্থাতেই বৌদ্ধ ভিক্ষুর কোনো ক্ষতি না করতে।

সোমারামা কি তামিল ছিলেন

সেই সময়ের রাজনীতিতে তামিলদের নিয়ে একধরনের উত্তেজনা ছিল। বন্দরনায়েকের হত্যাকারী তামিল বলে প্রচার ছড়িয়ে পড়ে সে সময়টায়। জানা যায়, আততায়ীর আসল নাম সোমারামান। এটি সোমারামার তামিল সংস্করণ। বন্দরনায়েকে যখন তাঁর বার্তায় সোমারামাকে ভিক্ষুর পোশাক পরা এক ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন, তখন এ কথা ছড়িয়ে পড়ে যে একজন তামিল বৌদ্ধ ভিক্ষুর পোশাক পরে প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করেছেন।

সে সময় কলম্বোয় তামিলরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্যার অলিভার হত্যাকারী যে তামিল নয়, গণমাধ্যমকে এমন স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

কেন এই হত্যাকাণ্ড

হত্যা তদন্তে ব্রিটেনের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড থেকে গোয়েন্দারা আসেন। তাঁরা সিলন পুলিশকে তদন্তে সহযোগিতা শুরু করেন। কলম্বো আদালতের চিফ ম্যাজিস্ট্রেট বন্দরনায়েকে হত্যাকাণ্ডে সাতজনকে অভিযুক্ত করেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন মাপিতিগামা বুদ্ধরাক্ষিথা, হেমচন্দ্রপিয়াসেনা জয়াবর্ধনে, পল্লিহাকারেজ অনূঢ়া দা সিলভা, টালডুওয়ে সোমারামা, উইরাসুরিয়ায় আরাচিগে নিউটন পেরেরা, বিমলা উইজেবর্ধনে ও আর্চচিগে কারোলিস আমেরাসিংহে।

অভিযুক্ত সোমারামা প্রথমে হত্যার দায় স্বীকার করেন পুলিশের কাছে। তবে পরে সুপ্রিম কোর্টে বিচার চলার সময় অবস্থান বদলান। আমেরাসিংহে রাজসাক্ষী হয়ে ক্ষমা পান। ষষ্ঠ অভিযুক্ত বিমলা উইজেবর্ধনেকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়। তবে পরে তাঁর রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।

তদন্তে বলা হয়, নির্বাচনে বন্দরনায়েকেকে সমর্থন ও তাঁর পক্ষে কাজ করার পরও বুদ্ধরাক্ষিথার অনুরোধ বন্দরনায়েকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আর এ কারণেই বন্দনায়েকেকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়।

তদন্তে বলা হয়, নির্বাচনে বন্দরনায়েকেকে সমর্থন ও তাঁর পক্ষে কাজ করার পরও বুদ্ধরাক্ষিথার অনুরোধ বন্দরনায়েকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আর এ কারণেই বন্দনায়েকেকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। বুদ্ধরাক্ষিথা বন্দরনায়েকের নির্বাচনী প্রচারে তহবিলের জোগান দিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর বুদ্ধরাক্ষিথা মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করতে চান। আর এ জন্য তিনি নিজের কলম্বো শিপিং লাইনস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির কথা বলেন। এইচপি জয়াবর্ধনে ছিলেন কলম্বো শিপিং লাইনসের সহপ্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু বন্দরনায়েকে এই চুক্তি করেন সিলনস শিপিং করপোরেশনের সঙ্গে। এরপর বন্দরনায়েকে লাভজনক চিনি উৎপাদনের লাইসেন্স বুদ্ধরাক্ষিথাকে দিতে অস্বীকার করেন। ফিলিপ গুনাবর্ধনে ও আর জি সেনানায়েকে নামে দুই মন্ত্রীর পরামর্শে বন্দরনায়েকে এ সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৬১ সালের ১২ মে পর্যন্ত বিচারকাজ চলে। প্রথম অভিযুক্ত বুদ্ধরাক্ষিথা থেরো, দ্বিতীয় এইচপি জয়াবর্ধনে এবং চতুর্থ অভিযুক্ত সোমারামাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।

পরে আপিল করলে বুদ্ধরাক্ষিথা থেরো ও জয়াবর্ধনেকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বন্দরনায়েকের বিধবা স্ত্রী সিরিমাভো বন্দরনায়েকে সরকার গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। যাবজ্জীবন থাকাকালেই বুদ্ধরাক্ষিথা ও জয়াবর্ধনের মৃত্যু হয়। আর সোমারামার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

অবশ্য এমন প্রচারণাও রয়েছে যে এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এবং দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি ছাড়া আরও ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত ছিল। এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন অপরাধজগতের ওসি কোরিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি সোমারামাকে ভাড়া করেছিলেন। অন্যরা দাবি করেন, তৎকালীন মন্ত্রী স্ট্যানলি ডি জোয়েসা এ হত্যাকাণ্ডের একজন সহযোগী ছিলেন। তাঁর ভাই দ্বিতীয় রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ সিডনি ডি জোয়েসা প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করার পরপরই সোমারামাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এগুলোর কোনোটিই শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি।

তথ্যসূত্র: দ্য ডেইলি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, বিবিসি, ইয়াহু নিউজ, লিংকডইন