মিয়ানমারে পিপলস ডিফেন্স আর্মি (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও) দেশব্যাপী সেনাবাহিনীর ওপর হামলা জোরদার করেছে। গত চার দিনে জান্তা বাহিনীর ১২ জনের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।
ইরাবতীর খবরে বলা হয়, রাখাইন ও কাচিন রাজ্য, জান্তার রাজধানী নেপিডো এবং মাগউই, সাগাইং, তানিনথারি অঞ্চলের এসব হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী পিডিএফ ও ইএও সূত্রে মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতী এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে হতাহতের বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তারা যাচাই করতে পারেনি।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পোনাজিয়ান শহরে গত বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এএ) জান্তা বাহিনীর লাইট ইনফেন্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৫৫০-এর সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই হামলা চালানো হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। জান্তা বাহিনী সেনাঘাঁটি রক্ষা করতে ভারী গোলাবর্ষণ করে ও বিমান হামলা চালায়। বিদ্রোহীদের দাবি, তারা পুরো সদর দপ্তর দখল করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
গত বুধবার মংডুর উত্তরে কাইয়িন চাউং-ইয়ান অং পিন সড়কে এএ-এর বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তার প্রায় ৮০ সেনার লড়াই হয়। এ সংঘর্ষে সাত সেনাসদস্য নিহত হন। পরে তাঁরা পিছু হটলে বিদ্রোহীরা সেনাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
কাচিন রাজ্যের পাকান্ত শহরের কাছে তার মা খান এলাকায় গত বৃহস্পতিবার জাতিগত কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) এবং ওই অঞ্চলের পিডিএফ বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই হয়েছে। ঘাঁটি রক্ষায় জান্তা বাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালায়।
গত মঙ্গলবার থেকে কিআইএ ও মিত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী জান্তার ঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছিল।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী অপরেসড পিপলস রেভল্যুশনারি ফোর্স (ওপিআরএফ) বলেছে, গত বৃহস্পতিবার রাজধানী টাটকান এলাকার নিয়াং পাটে একটি পরিত্যক্ত ঘাঁটিতে আগুন দিয়েছে।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি জান্তা সরকারের সদস্যরা ওই ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায়। বিদ্রোহীরা আগুন দেওয়ার পর জান্তা সেনারা ছয়টি গাড়ি নিয়ে সেখানে যায়। তারা সেখানে স্কুল ও আশ্রমে অবস্থা নিয়েছে।
জান্তাবিরোধী ইয়াং ফোর্স ইউজি বলেছে, মাগউই অঞ্চলের নাগা ফাউং কান এলাকায় গত মঙ্গলবার জান্তাপন্থী পিউ সাউ তি-এর যোদ্ধাদের ওপর তারা ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
ড্রোন হামলার পর দুই পক্ষে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। তবে লড়াইয়ে জান্তাপন্থী মিলিশিয়াদের কতজন হতাহত হয়েছেন, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
একই দিন মিয়াইংয়ে ইউনিভার্সিটি অব কম্পিউটার স্টাডিজের ক্যাম্পাসের কাছে জান্তা বাহিনীর ওপর বিদ্রোহীরা হামলা চালায়। পরদিন বুধবারও বিদ্রোহীরা থায়েত কাওয়া এলাকায় জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়।
সিভিল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন অব মিয়াউং (সিডিএসওএম) বলেছে, ১২টি সামরিক ট্রাকে করে ২০০ সেনা মিনমু শহরের একটি স্কুলে অবস্থান করে। তাদের ওপর গত বৃহস্পতিবার ড্রোন হামলা চালায় বিদ্রোহীরা।
ড্রোন হামলার পর একই দিন সন্ধ্যায় আরও তিনটি ট্রাকে করে নতুন করে জান্তা সেনারা সেখানে যোগ দেন। তাঁরা সেখান থেকে আশপাশের এলাকায় নির্বিচার গোলাবর্ষণ করেন। এতে তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
তবে ড্রোন হামলায় সেনাদের কতজন হতাহত হয়েছেন, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
মিউয়াং স্পেশাল পিডিএফ বলেছে, গত বুধবার সাগাইং অঞ্চলের মনিউয়া শহরের তাউ পু এলাকায় জান্তা বাহিনীর ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা।
ঘাঁটিতে এক সেনা কর্মকর্তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলাকালে ড্রোনের মাধ্যমে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে তিন সেনাসদস্য নিহত ও অন্য দুজন আহত হন।
তানিনথারি অঞ্চলের থায়েত চাউং শহরে গত বুধবার পিডিএফ বিদ্রোহীরা জান্তার লাইট ইনফেন্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৪০৪ ও ৪০৩-এর সদর দপ্তরে বোমা হামলা চালায়। এতে ছয় সেনা নিহত ও আরও সাতজন আহত হন।
একই দিন পাহাড়ে অবস্থিত জান্তার উইন ওয়া ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। তবে এতে কতজন হতাহত হয়েছেন, তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি।