দ্বন্দ্ব–সংঘাতে আগবাড়িয়ে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতিতে আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখল রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো এ সম্ভাবনার কথা জানালেন।
বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধের ‘ক্রমবর্ধমান’ হুমকির বিষয়ে সতর্ক করার কয়েক দিন পর এ কথা জানালেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, ‘তাদের (মার্কিন) কৌশলে এটি (একতরফা পারমাণবিক হামলা) রয়েছে, নথিতে এটিকে একটি প্রতিরোধমূলক আঘাত হিসেবে উল্লেখ করা আছে। আমাদের এটি নেই। অন্যদিকে আমরা আমাদের কৌশলে প্রতিশোধমূলক হামলার বিষয়টি রেখেছি।’
বুধবার পুতিন বলেছিলেন, রাশিয়া কোনো অবস্থায় এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করবে না—এ ধারণার অর্থ এটা নয় যে মস্কো হামলার শিকার হয়েও এটি ব্যবহার করবে না। কারণ, আমাদের ভূখণ্ডে কোনো হামলা আসন্ন হয়ে উঠলে এ অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দেবে।
পুতিন বলেন, এমনকি রাশিয়া যদি তার দিকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ হতে দেখে বিলম্ব না করে প্রতিশোধ নেয়ও, তবে তার অর্থ হবে, রুশ ফেডারেশনের ভূখণ্ডে শত্রুপক্ষের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের পতন অনিবার্য—যেন ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে এসে এই পড়ল।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের সম্ভাবনাকে বাদ দেওয়া হয়নি; অথচ রাশিয়ার নীতি হলো, একেবারে নিরুপায় হয়ে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করা।
‘তাই আমরা যদি পারমাণবিক অস্ত্রের হামলা বন্ধের বিষয়ে কথা বলতে চাই, তবে আমাদের মার্কিন অংশীদারদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোত্তম (পরিশীলিত) আচরণ ও ধারণা গ্রহণ করতে হবে। আমরা এ সম্পর্কে (পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে) ভাবনার পর্যায়ে আছি। এ সম্পর্কে অতীতে ও বছর বছর যারা উঁচু গলায় কথা বলেছে, তাদের কারও মধ্যে লজ্জা দেখা যায়নি’, বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ভ্লাদিমির পুতিন আরও বলেন, ‘যদি সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ এ ধারণা পোষণ করে যে প্রতিরোধমূলক হামলার ওই তত্ত্বকে তারা বাস্তবে ঘটিয়ে দেখাবে, যেমনটা আমরা ধারণা করি না; তবে এই হুমকি আমাদের ভাবিয়ে তুলবে।’
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের সম্ভাবনাকে বাদ দেওয়া হয়নি; অথচ রাশিয়ার নীতি হলো, একেবারে নিরুপায় হয়ে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনের কর্মকর্তারা আগে বলেছিলেন, যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিণতি সম্পর্কে মস্কোকে সর্বোচ্চ সতর্ক করা হয়েছে।
গত বুধবার ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক যুদ্ধের ‘ক্রমবর্ধমান’ হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করেন। এ সময়ও তিনি সংঘাতে রাশিয়া আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না—এই অঙ্গীকারের কথা একরকম এড়িয়ে গেছেন।
বুধবার পুতিন বলেছিলেন, ‘রাশিয়া কোনো অবস্থায় এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করবে না—এ ধারণার অর্থ এটা নয় যে মস্কো হামলার শিকার হয়েও এটি ব্যবহার করবে না। কারণ, আমাদের ভূখণ্ডে কোনো হামলা আসন্ন হয়ে উঠলে এ অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দেবে।
আমরা যদি পারমাণবিক অস্ত্রের হামলা বন্ধের বিষয়ে কথা বলতে চাই, তবে আমাদের মার্কিন অংশীদারদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোত্তম (পরিশীলিত) আচরণ ও ধারণা গ্রহণ করতে হবে।ভ্লাদিমির পুতিন, রুশ প্রেসিডেন্ট
পুতিন এসব মন্তব্য এমন একসময় করলেন, যখন রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে চলতে শীত এসে পড়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়া অব্যাহতভাবে গোলাবর্ষণ করে চলেছে এবং নিজেদের ভূখণ্ডেও আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
গত সোমবার ইউক্রেনজুড়ে জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এ হামলার ফলে কিয়েভ, ওডেসাসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে দেশটিতে সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এসব হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে।