নারী শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে এবার শর্ত সাপেক্ষে প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত মেয়েদের পড়াশোনার অনুমতি দিয়েছে তালেবান। তারা ঘোষণা দিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোয় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। তালেবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে।
তালেবানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল ও শিক্ষা কেন্দ্রগুলো খোলা রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এর সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সবাইকে পর্দা মেনে পোশাক পরতে হবে।
তবে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকছে। বেশির ভাগ চাকরিতেও নারীরা নিষিদ্ধ থাকছেন।
২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। ক্ষমতা দখলের পর আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নারীদের জন্য পৃথক শ্রেণিকক্ষ ও প্রবেশপথ চালু করেছিল তালেবান। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের শুধু নারী শিক্ষক বা বয়স্ক পুরুষ শিক্ষক পড়াতে পারতেন।
সবশেষ গত মাসে আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ওপর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তালেবান সরকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও নারীদের পড়াশোনা নিষিদ্ধ করে।
এ ছাড়া আফগানিস্তানে পুরুষ আত্মীয়স্বজন ছাড়া নারীদের একা একা ভ্রমণ নিষিদ্ধ। তাঁরা পার্ক ও শরীরচর্চা কেন্দ্রেও যেতে পারবেন না। ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় তাঁদের পর্দা মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
আন্তর্জাতিক সমালোচনার জবাবে তালেবানের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী বলেন, তাঁরা শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে আফগানিস্তানে নারীদের পড়াশোনার অনুমতি দেবেন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচও সিদ্ধান্তটির সমালোচনা করেছে। তালেবানের এ পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করেছে তারা।
জি-৭ ভুক্ত দেশ—কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও তালেবানকে সতর্ক করেছেন। একে মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তুরস্ক, কাতার ও পাকিস্তানের মতো বড় বড় মুসলিম দেশগুলোও তালেবান সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।