প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় নেপালে উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ার সেই মুহূর্ত

নেপালের পোখারায় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
 ছবি: এএফপি

নেপালের ঐতিহ্যবাহী মাঘি সংক্রান্তি উৎসব (মাঘের প্রথম দিন) উদ্‌যাপনের জন্য কয়েক দিন আগে তানাহুনের দুলেগাউন্দা এলাকা থেকে পোখারায় আসেন কল্পনা সুনার। গতকাল রোববার সকালে বাড়ির সামনের আঙিনায় কাপড় ধুচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখতে পান আকাশ থেকে একটি উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে।

নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কল্পনা সুনার বলেন, ‘উড়োজাহাজটি অস্বাভাবিকভাবে কাত-চিৎ হচ্ছিল এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর আমি দেখলাম সেতি গিরি সংকট থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে।’

গতকাল সকালে পোখারায় ইয়েতি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার মুহূর্তটিকে এভাবেই বর্ণনা করেন কল্পনা সুনার। শুধু কল্পনা–ই নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ার দৃশ্য দেখেছেন, শুনতে পেয়েছেন বিস্ফোরণের শব্দ।

নেপালের পোখারা মেট্রোপলিটন সিটি-৭–এর ঘারিপাতানে বেলা ১১টার দিকে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। স্থানীয় বাসিন্দা গীতা সুনারের বাড়ি থেকে প্রায় ১২ মিটার দূরত্বে মাটিতে উড়োজাহাজটির একটি ডানা ভেঙে পড়ে। উড়োজাহাজটির সামনের অংশ সেতি গিরি সংকট এলাকায় ভেঙে যায় এবং তা পোখারা-১৫–এর নায়া গাউন এলাকায় এসে পড়ে। আর উড়োজাহাজের পেছনের অংশ পড়ে সেতি গিরি সংকটে।

অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পাওয়া গীতা বলেন, ‘উড়োজাহাজটি আমাদের বাড়ির আরেকটু কাছে পড়লেই বসতি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ঘটনাস্থলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে জনবসতি এলাকায় এটি বিধ্বস্ত না হওয়ায় সেখানকার মানুষের প্রাণহানি এবং মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’

নেপালে গতকাল মাঘি সংক্রান্তি থাকায় সকালে মন্দিরে গিয়েছিলেন গীতা। মন্দিরে উপাসনা শেষে খাবার খেতে বাড়িতে ফিরে যান তিনি। বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়ে গীতা ঘরের বাইরে বের হয়ে দেখতে পান উড়োজাহাজটি ততক্ষণে বিধ্বস্ত হয়েছে।

গীতা বলেন, সেতি গিরি সংকটের দুই পাশে আগুন জ্বলছিল। মৃতদেহগুলো এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। উড়োজাহাজটি স্থলভাগের যে জায়গাটিতে প্রথম আছড়ে পড়েছিল, সেখানে এটির ধ্বংসাবশেষ ও যাত্রীদের ছোট ছোট ব্যাগ ছড়ানো ছিল।
ঘটনার সময় ওই এলাকার শিশুদের কেউ কেউ রাস্তায় খেলাধুলা করছিল। তাদের ভাষ্য, উড়োজাহাজটি ঘুরপাক খেতে খেতে মাটিতে আছড়ে পড়ে। তারা উড়োজাহাজটির ভেতরে যাত্রীদের চিৎকার শুনতে পেয়েছে।

সামির ও প্রাজওয়াল পারিয়ার—দুজনেরই বয়স ১১ বছর। উড়োজাহাজটি যখন ঘুরপাক খেতে খেতে নিচের দিকে আছড়ে পড়ছিল, তখন এ দুই শিশু খেলায় ব্যস্ত ছিল। শুরুতে তারা ভেবেছিল এটি কোনো খেলনা। তবে যখনই উড়োজাহাজটি তাদের খুব কাছে চলে এল, তখন তারা বুঝতে পারল ও দৌড়ে পালাল।

কাঠমান্ডু পোস্টকে সামির বলে, ‘হঠাৎই ধোঁয়ার কারণে চারপাশ অন্ধকার হয়ে পড়ে। মনে হচ্ছিল, উড়োজাহাজটির টায়ার আমাদের ওপর আছড়ে পড়বে।’

বাইনশা বাহাদুর বিকে একই এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, উড়োজাহাজটি যদি সোজাসুজি পড়ত, তাহলে তা জনবসতির এলাকায় আছড়ে পড়ত এবং আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতো।

বিকে আরও বলেন, ‘উড়োজাহাজের সাত থেকে আটটির মতো জানালা তখনো অক্ষত ছিল। আমরা ভেবেছিলাম যাত্রীরা হয়তো বেঁচে আছেন। তবে দ্রুতই আগুন উড়োজাহাজটির অপর অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ভয়ার্ত চোখে তা দেখছিলাম।’