আত্মরক্ষার স্বার্থে আগেই পারমাণবিক হামলা চালানোর অধিকারের বিধান যুক্ত করে নতুন একটি আইন পাস করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির নেতা কিম জং-উন বলেছেন, এ আইন পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান ‘অপরিবর্তনীয়’ জায়গায় নিয়ে গেছে এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আজ শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ এসব কথা জানিয়েছে।
এমন সময় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যখন ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরুর জন্য উত্তর কোরিয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। ওই বছর ঐতিহাসিক বৈঠকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ২০১৮ সালে অন্য বিশ্ব নেতারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে সরে আসতে কিমকে রাজি করাতে ব্যর্থ হন।
উত্তর কোরিয়ার পার্লামেন্ট সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলি গতকাল বৃহস্পতিবার আইনটি পাস করে। ২০১৩ সালে প্রণীত এ-সংক্রান্ত আইনের পরিবর্তে নতুন আইনটি করা হয়। দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী কি না, এই আইনে প্রথমবারের মতো বিষয়টি উঠে এল।
পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে কিম বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র নীতিসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ তাৎপর্যটা হলো একটি অপরিবর্তনীয় সীমারেখা টেনে দেওয়া, যাতে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কোনো দর-কষাকষি না হয়।’ শত বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও তিনি কখনো এ অস্ত্র সমর্পণ করবেন না বলে জানান।
যেসব কারণে পারমাণবিক হামলা চালানো হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—একটি আসন্ন পারমাণবিক হামলার হুমকি; যদি দেশের নেতৃত্ব, জনগণ কিংবা অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে অথবা যুদ্ধের সময় নিজেদের প্রাধান্য অর্জন।
একজন পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, আইনটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে উত্তর কোরিয়ার অবস্থানকে সুসংহত করার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি নিশ্চয়তা হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র নীতির ‘স্বচ্ছ, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও আদর্শ বৈশিষ্ট্য’ নিশ্চিত করবে।
হাওয়াইভিত্তিক প্যাসিফিক ফোরামের আঞ্চলিকবিষয়ক পরিচালক রব ইয়র্ক বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করার বিষয়টি বিরল। এটা উত্তর কোরিয়ার নিজস্ব অবস্থানের ফল হতে পারে—দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে এবং নিজেদের অস্তিত্বের জন্য এটাকে কতটা অপরিহার্য হিসেবে দেখছে।’
২০১৩ সালের মূল আইনে বলা হয়েছিল, পারমাণবিক অস্ত্রধারী শত্রুরাষ্ট্রের আগ্রাসন কিংবা হামলা প্রতিহত করতে এবং প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে উত্তর কোরিয়া।
কিন্তু নতুন আইনে আসন্ন ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের হামলা কিংবা নেতৃত্বসহ দেশের কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে হামলার বিষয়টি শনাক্ত হলেই আগেভাগে পারমাণবিক হামলা চালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
উত্তর কোরিয়া ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট এনকে নিউজের প্রতিষ্ঠাতা শাদ ও’ক্যারল টুইটে লেখেন, ‘এককথায়, সত্যিই কিছু অস্পষ্ট ও অনিশ্চিত পরিস্থিতি রয়েছে, যে পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়া এখন দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে জানিয়েছে।’ এমন অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক পরিকল্পনাকারীদের জন্য বার্তা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।