ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েশি দ্বীপের একটি গুহায় অর্ধলক্ষ বছরের বেশি পুরোনো একটি চিত্রকর্ম আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো চিত্রকর্ম। এটিতে লাল রঙের বড় আকারের একটি শূকরকে ঘিরে তিন ব্যক্তির উপস্থিতির বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় আবিষ্কৃত বহু পুরোনো গুহাচিত্রকর্ম এই ইঙ্গিত দেয় যে এমন চিত্রকর্মের জন্ম ইউরোপে নয়, যা দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হচ্ছিল। এটি এ ইঙ্গিতও দেয়, চিত্রকর্মের মাধ্যমে গল্প বর্ণনা করা মানব ও শিল্পকর্মের ইতিহাসের অনেক পুরোনো একটি অধ্যায়। এটি আমাদের জ্ঞাত সময়ের চেয়ে পুরোনো।অ্যাডাম ব্রুম, পুরাতত্ত্ববিদ
এ আবিষ্কারের ওপর গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে এক গবেষণা প্রতিবেদন। এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সন্ধান পাওয়া চিত্রকর্মটি প্রায় ৫১ হাজার ২০০ বছরের পুরোনো।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যাক্সিম অবার্ট বিবিসিকে বলেন, মানবসভ্যতার বিবর্তন নিয়ে প্রচলিত ধারণা পাল্টে দেবে এ আবিষ্কার। তিনি বলেন, ‘এই চিত্রকর্মে দুর্বোধ্য এক কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। (আলংকারিকভাবে বা চিত্রকর্মের মাধ্যমে) কাহিনির বর্ণনা নিয়ে আমাদের কাছে থাকা প্রমাণগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে পুরোনো। চিত্রকর্মটি আমাদের দেখিয়েছে, ওই সময়েও (অর্ধলাখ বছর আগে) মানুষের ছিল বিমূর্ত চিন্তাভাবনার সক্ষমতা।’
লিয়াং কারামপুয়াং গুহার চিত্রকর্মের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণে গবেষকেরা এক নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক ক্রিস্টাল লেজার। চিত্রকর্মটি যাঁদের তৈরি, তাঁদের সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে।
এর আগের রেকর্ড পুরোনো চিত্রকর্ম আবিষ্কার করা বিজ্ঞানীদের দলে ছিলেন অধ্যাপক অবার্ট। চিত্রকর্মটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আফ্রিকার একটি বিশেষ জাতের শূকরের প্রতিকৃতি। ধারণা করা হয়, এ চিত্রকর্মের বয়স অন্তত ৪৫ হাজার ৫০০ বছর।
সাম্প্রতিকতম চিত্রকর্ম যেখানে পাওয়া গেছে, সেই লিয়াং কারামপুয়াং গুহা ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েশি দ্বীপের ম্যারোস–প্যাংকেপ অঞ্চলে অবস্থিত। চিত্রকর্মটি পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় নেই। এতে দেখানো হয়েছে, তিন ব্যক্তি একটি বড় শূকরকে ঘিরে রয়েছে। একই গুহায় পাওয়া গেছে আরও কিছু চিত্রকর্ম।
মানবসভ্যতার বিবর্তন নিয়ে প্রচলিত ধারণা পাল্টে দেবে এ আবিষ্কার। এই চিত্রকর্মে দুর্বোধ্য এক কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। (আলংকারিকভাবে বা চিত্রকর্মের মাধ্যমে) কাহিনির বর্ণনা নিয়ে আমাদের কাছে থাকা প্রমাণগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে পুরোনো। চিত্রকর্মটি আমাদের দেখিয়েছে, ওই সময়েও মানুষের ছিল বিমূর্ত চিন্তাভাবনার সক্ষমতা।ম্যাক্সিম অবার্ট, অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক
এ–সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনের রচয়িতাদের একজন গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির পুরাতত্ত্ববিদ অ্যাডাম ব্রুম। তিনি বলেন, ‘এ চিত্রকর্মে কী বলতে চাওয়া হয়েছে, আমরা নিশ্চিতভাবে সেটি জানি না।’
অধ্যাপক অবার্টের ধারণা, প্রায় ৬৫ হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় এসে পৌঁছানোর আগে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া থেকে যেসব মানুষ যাত্রা শুরু করেছিলেন, এই চিত্রকর্ম সম্ভবত তাঁদের প্রথম দলের কাজ।
এর আগে কোনো কাহিনি বর্ণনা করা প্রথম যে চিত্রকর্মের সন্ধান পাওয়া যায়, তা ইউরোপের ছিল বলে ধারণা করা হয়।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নৃতত্ত্ববিদ ক্রিস স্ট্রিঞ্জার বলেন, ইন্দোনেশিয়ার গুহায় আবিষ্কৃত চিত্রের যে বয়স বলা হচ্ছে, তা ‘খুবই কৌতূহল–উদ্দীপক’। কেননা, এটি ইউরোপসহ অন্যান্য স্থানে পাওয়া চিত্রকর্মের চেয়ে অনেক পুরোনো।
এর আগে আবিষ্কৃত রেকর্ডধারী পুরোনো চিত্রকর্মটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আফ্রিকার একটি বিশেষ জাতের শূকরের প্রতিকৃতিকে। ধারণা করা হয়, ওই চিত্রকর্মের বয়স অন্তত ৪৫ হাজার ৫০০ বছর।
লিয়াং কারামপুয়াং গুহার চিত্রকর্মের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণে গবেষকেরা এক নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক ক্রিস্টাল লেজার। চিত্রকর্মটি যাঁদের তৈরি, তাঁদের সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে।
পুরাতত্ত্ববিদ অ্যাডাম ব্রুম বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় আবিষ্কৃত বহু পুরোনো গুহাচিত্রকর্ম এই ইঙ্গিত দেয় যে এমন চিত্রকর্মের জন্ম ইউরোপে নয়, যা দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হচ্ছিল। এটি এ ইঙ্গিতও দেয়, চিত্রকর্মের মাধ্যমে গল্প বর্ণনা করা মানব ও শিল্পকর্মের ইতিহাসের অনেক পুরোনো একটি অধ্যায়। এটি আমাদের জ্ঞাত সময়ের চেয়ে পুরোনো।’