সুদর্শন নারী রূপে হাজির হন তিনি। তাতেই এশিয়াজুড়ে অনেক পুরুষের মনে ঠাঁই করে নেন। তাঁদের সঙ্গে আলাদা ভিডিও কলে কথা বলেন ওই ‘নারী’। কথার জালে আটকে ফেলেন ভালোবাসার ফাঁদে।
হংকংয়ের পুলিশ বলছে, এসব পুরুষ সত্যিকারের কোনো নারীর প্রেমে নন; বরং ‘ডিপফেক রোমাঞ্চ কেলেঙ্কারি’র ফাঁদে পড়েছেন। ডিপফেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় ওই ভিডিও তৈরি করেছে একটি অপরাধী চক্র। আর ফাঁদে পড়া পুরুষদের কাছ থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বেশি (টাকার হিসাবে প্রায় ৫৫২ কোটি)।
ছবি বা ভিডিওকে বিকৃত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিখুঁতভাবে তৈরি করে হুবহু আসলের মতো বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রযুক্তির জগতে ‘ডিপফেক’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এসব ভিডিওতে কোনো ব্যক্তিকে এমন কথা বলতে শোনা যায়, যা তাঁরা বলেননি। এমন কাজ করতে দেখা যেতে পারে, যা তাঁরা করেননি। ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় বিকৃত করা এসব ভিডিও কনটেন্ট প্রচলিত টেক্সট ও বিকৃত করা ছবির চেয়েও মারাত্মক। এসব ভুয়া ভিডিও ও তথ্য মানুষকে বেশি টানতে পারে।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই একটি ডিপফেক রোমাঞ্চ কেলেঙ্কারিতে পড়ে এশিয়ায় অনেক পুরুষের কোটি কোটি ডলার খোয়ানোর ওই কথা প্রকাশ করে হংকং পুলিশ।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই একটি ডিপফেক রোমাঞ্চ কেলেঙ্কারিতে পড়ে এশিয়ায় অনেক পুরুষের কোটি কোটি ডলার খোয়ানোর ওই কথা প্রকাশ করে হংকং পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কথিত প্রতারক চক্রের দুই ডজনের বেশি সদস্যকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে তারা। এসব প্রতারক তাইওয়ান থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুর, এমনকি ভারতের অনেক পুরুষকেও তাঁদের ফাঁদে ফেলেছেন।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। হংকংয়ের হাং হোম এলাকার ৪ হাজার বর্গফুটের একটি অফিস থেকে প্রতারক চক্রের এই সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বয়স ২১ থেকে ৩৪ বছর। সন্দেহভাজন এই প্রতারকেরা প্রধানত উচ্চশিক্ষিত। তাঁদের অনেকেই ডিজিটাল মিডিয়া ও প্রযুক্তিতে স্নাতক ডিগ্রিধারী। স্থানীয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তাঁদের ওই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োগ দেন প্রতারক চক্রের মূল হোতারা।
পুলিশ আরও বলেছে, ধারণা করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা একটি ভুয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই তাঁরা ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অর্থ বিনিয়োগে বাধ্য করতেন।
গত আগস্টে ওই চক্রের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য পায় হংকং পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে এক বছর ধরে চক্রটি তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তার অভিযানকালে পুলিশ ওই কার্যালয় থেকে শতাধিক মুঠোফোন, নগদ প্রায় ২৬ হাজার ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ও বেশ কিছু দামি ঘড়ি জব্দ করেছে।
হংকং পুলিশের ভাষ্য, ওই রোমাঞ্চ চক্রের ডিপফেক কেলেঙ্কারি শুরু হয় একটি ভিডিও বার্তা পাঠানোর মধ্য দিয়ে। বার্তায় একজন ‘আকর্ষণীয় নারী’ বলেন, ভুলক্রমে তিনি তাঁর (ভিডিও বার্তার গ্রহীতা) মুঠোফোন নম্বরটি যুক্ত করেছেন।
দ্বিতীয় ধাপে কথিত স্ক্যামাররা তাঁদের ফাঁদে পা দেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে অনলাইনে প্রেমের অভিনয় শুরু করেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে একসঙ্গে পরিকল্পনা শুরু করা পর্যন্ত এ স্ক্যামাররা ভুক্তভোগীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান।
পুলিশ বলেছে, এ চক্র অত্যন্ত সংগঠিত। প্রতারণার বিভিন্ন ধাপের কার্যকলাপ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বিভিন্ন শাখা। এমনকি চক্রের সদস্যদের প্রতারণায় দক্ষ করে তুলতে আয়োজন করা হয় প্রশিক্ষণ। শেখানো হয়, ফাঁদে পা দেওয়া ব্যক্তির সরলতা ও অনুভূতি কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, সেসব বিষয়েও। ফেসবুকে প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালের কিছু অংশ পোস্টও করেছে তারা।
গত আগস্টে ওই চক্রের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য পায় হংকং পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে এক বছর ধরে চক্রটি তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এদিকে, গ্রেপ্তার অভিযানকালে পুলিশ ওই কার্যালয় থেকে শতাধিক মুঠোফোন, নগদ প্রায় ২৬ হাজার ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ও বেশ কিছু দামি ঘড়ি জব্দ করেছে।