দক্ষিণ কোরিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। আজ মঙ্গলবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি। ‘কমিউনিস্ট বাহিনীর’ হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউন সুক-ইওল বলেন, ‘উদারপন্থী দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন শক্তি নির্মূল করতে আমি জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করছি।’
এমন এক সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিলেন, যখন আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাঁর দল পিপল পাওয়ার পার্টি এবং বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। গত সপ্তাহে পার্লামেন্টারি কমিটির মাধ্যমে বেশ ছোট আকারের বাজেট পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা।
বিরোধী আইনপ্রণেতারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব বাজেটে কাটছাঁট করেছেন বলে অভিযোগ এনে ইউন সুক-ইওল বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই ও জননিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো। বাজেটে কাটছাঁটের ফলে দেশ মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে যাচ্ছে।
পার্লামেন্টের বিরোধী দলের সদস্যদের প্রতি ইঙ্গিত করে ইউন সুক-ইওল বলেন, ‘আমাদের জাতীয় পরিষদ অপরাধীদের স্বর্গে পরিণত হয়েছে। এটি আইনি একনায়কতন্ত্রের আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। তারা বিচারিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিতে চাইছে। একই সঙ্গে আমাদের উদারপন্থী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে চাইছে।’
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার ৩০০ সদস্যের পার্লামেন্টে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত ‘অনিবার্য’ ছিল বলে গতকালের ভাষণে উল্লেখ করেছেন ইউন সুক-ইওল। তাঁর মতে, বিরোধী দলের সদস্যরা ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’। ভাষণে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি থেকে দেশকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করব আমি।’
এদিকে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের স্ত্রী এবং তাঁর দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে জড়িয়ে কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্বাধীন কোনো তদন্ত করতে রাজি নন তিনি। প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্তেরও কড়া সমালোচনা করছেন তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সামরিক আইন জারির বিষয়টিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মনে করছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক ইউনিস কিম। রাজধানী সিউল থেকে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত হতবাক করার মতো। ক্ষমতা নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাঁর জনসমর্থন ভালো নয়। বলতে গেলে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক সব প্রেসিডেন্টের চেয়ে কম। আর জরিপকারী প্রতিষ্ঠান রিয়েলমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে এই সমর্থন মাত্র ২৫ শতাংশে পৌঁছেছে।