মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দলের সাবেক এক আইনপ্রণেতা এবং স্বনামধন্য এক অধিকারকর্মীসহ চার কারাবন্দীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে দেশটির জান্তা। সোমবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে দেশটিতে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা এটি। খবর এএফপির।
গত বছর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পর ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় জান্তা। সোমবার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের প্রতিবেদনে বলা হয়, নৃশংস ও অমানবিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়ায় চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। কারাবিধির আওতায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে কখন ও কীভাবে এই চার ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো, তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেনি সংবাদপত্রটি।
সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সাবেক আইনপ্রণেতা ফিয়ো জেয়া থ–কে জানুয়ারিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। গত বছরের নভেম্বরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সরকারি বাহিনীর ওপর বেশ কয়েকটি হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল ফিয়ো জেয়া থ-র বিরুদ্ধে। এর মধ্যে গত বছরের আগস্টে ইয়াঙ্গুনে একটি কমিউটার ট্রেনে বন্দুক হামলার ঘটনাটিও আছে। ওই হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য নিহত হন।
গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকর্মী কিয়াও মিন ইউকেও সামরিক ট্রাইব্যুনালে একই সাজা দেওয়া হয়।
অপর দুই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল ইয়াঙ্গুনে এক নারীকে হত্যার দায়ে। তাঁদের অভিযোগ, ওই নারী জান্তার জন্য তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করছিলেন।
মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা বন্ধ ছিল। তবে গত মাসে জান্তা ঘোষণা করেছিল, তারা এই চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চায়। সে সময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড সমালোচনার মধ্যে পড়েছিল তারা।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমার জান্তার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তকে মানুষের জীবনযাপন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় আরও অনেক ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, জান্তার সামরিক আইন অনুযায়ী ২৩টি ‘অনির্দিষ্ট ও ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত অপরাধের ঘটনায়’ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর যেকোনো ধরনের সমালোচনাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হোরসি এক টুইটার পোস্টে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ ঘটনাকে জঘন্য কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন।