জাপানে ভূমিকম্পের ফলে সড়কের একাংশ ধসে পড়েছে। ওয়াজিমা, ইশিকায়া, ১ জানুয়ারি
জাপানে ভূমিকম্পের ফলে সড়কের একাংশ ধসে পড়েছে। ওয়াজিমা, ইশিকায়া, ১ জানুয়ারি

জাপানে উৎসবমুখর পরিবেশে হঠাৎ আতঙ্কের ছায়া

নতুন বছরের প্রথম দিনটি জাপানে পালন করা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। মধ্যরাত থেকেই দেশের বিভিন্ন জনপদের মন্দির ও মঠগুলোতে শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও পারিবারিক জীবনের আনন্দ-সমৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনা জানাতে সমবেত হওয়া মানুষের ভিড় দেখা যায়। মন্দিরে মানুষের এমন ভিড় কার্যত চলতে থাকে নতুন বছরের প্রথম দিনের পুরো সময়জুড়ে।

প্রার্থনা শেষে বাড়ি ফিরে পারিবারিকভাবে মানুষ সমবেত হয় নতুন বছরের বিশেষ আহারের সাথে পানীয়র মধ্য দিয়ে আনন্দের মুহূর্ত ভাগাভাগি করে নেয়। সেদিক থেকে জাপানে নববর্ষ হচ্ছে সবদিক থেকেই পারিবারিক এক উৎসব। পরিবারের প্রবীণ সদস্য থেকে শুরু করে শিশু—সবাই যেখানে নিজের মতো করে বছরের প্রথম দিনটিতে উপভোগ করে।

চীনা পঞ্জিকার হিসাব অনুযায়ী সময়কে ১২ বছরের যে চক্রে ভাগ করা হয়েছে, সেই বিভাজন অনুসারে চলতি বছর জাপান ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হচ্ছে ড্রাগন বর্ষ। জাপানে ড্রাগন বর্ষের সূচনার দিনটিও মন্দিরে প্রার্থনা জানানো ও নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করার মধ্য দিয়েই শুরু হয়। তবে স্থানীয় সময় বিকেল চারটার কিছু পর জাপান সাগরের তীরবর্তী বিস্তৃত এলাকাজুড়ে হঠাৎ করে আঘাত হানা এক ভূমিকম্প উৎসবমুখর সেই পরিবেশে নিয়ে এসেছে আতঙ্কের কালো ছায়া।

রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৬, যা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। ভূমিকম্পের ঠিক পরপর জাপানের আবহাওয়া সংস্থা মধ্য জাপানের ইশিকাওয়া জেলার উপকূল এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করে এবং পরে জানায় যে ১ দশমিক ৬ মিটার উঁচু সুনামির ঢেউ ইশিকাওয়া জেলার নেতো উপদ্বীপের ওয়াজিমা বন্দরে পৌঁছে যেতে দেখা গেছে। আবহাওয়া সংস্থা আরও জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল নেতো অঞ্চলের অগভীর সমুদ্রে এবং সুনামির সরাসরি আঘাত এড়িয়ে যেতে এলাকাবাসীকে উঁচু নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া দেওয়া হয়।

ইশিকাওয়ার স্থানীয় সরকার এবং ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভূমিকম্পে অনেক বাড়িঘর ধসে পড়েছে এবং ৩০ হাজারের বেশি বাসভবনে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইশিকাওয়া জেলায় শিকা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালক প্রতিষ্ঠান হোকুরিকু বিদ্যুৎ–শক্তি কোম্পানি ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছে যে দুটি পরমাণু চুল্লি বন্ধ থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

এখনো পর্যন্ত ভূমিকম্পে প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে জাপান সরকার বলছে, ইশিকাওয়া জেলায় ধ্বংসাবশেষের নিচে মানুষের আটকা পড়ে যাওয়ার ছয়টি ঘটনা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। অন্যদিকে আবহাওয়া সংস্থা বলছে, এ ধরনের বড় আকারের ভূমিকম্পের পর সাধারণত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পরবর্তী কম্পন অব্যাহত থাকে। তাই এলাকাবাসীর সতর্কতা বজায় রাখা দরকার। সন্দেহ নেই জাপানের বড় এক অংশজুড়ে নববর্ষের শুরুতে আঘাত হানা ভূমিকম্প উৎসব আর ছুটির আনন্দ অনেকটাই ভন্ডুল করে দিয়েছে।