জাপানে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে
জাপানে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে

জাপানে ৬ মাসে নিজবাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা গেছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ

জাপানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিজবাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা গেছেন। দেশটির পুলিশের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এসব মানুষের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার জনকে মৃত্যুর এক মাসের বেশি সময় পর উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় জাতীয় পুলিশ সংস্থা। সংস্থাটির প্রত্যাশা, তাদের এ প্রতিবেদন জাপানের বিপুলসংখ্যক প্রবীণ মানুষের একাকী জীবনযাপন করে মারা যাওয়ার বিষয়কে লোকচক্ষুর সামনে নিয়ে আসবে।

জাতীয় পুলিশ সংস্থার সংগ্রহ করা এ বছরের প্রথম ছয় মাসের তথ্যে দেখা গেছে, একাকী জীবনযাপন করা ৩৭ হাজার ২২৭ জনকে তাঁদের নিজেদের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ৬৫ বছর বা এর বেশি বয়সী।

ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যাওয়া ওই মানুষদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশকে তাঁদের মৃত্যুর এক দিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রায় ৩ হাজার ৯৩৯ জনের মরদেহ মিলেছে মৃত্যুর এক মাসের বেশি সময় পরে। এ ছাড়া, ১৩০ জনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে তাঁদের মৃত্যুর অন্তত এক বছর পর।

এসব মানুষের মধ্যে ৭ হাজার ৪৯৮ জনের বয়স ৮৫ বছর বা এর বেশি। ৫ হাজার ৯২০ জনের বয়স ৭৫-৭৯ বছর এবং ৫ হাজার ৬৩৫ জনের বয়স ৭০-৭৪ বছরের মধ্যে।

জাপানের সরকারি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনএইচকে জানায়, যেসব মৃত মানুষের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি, তাঁদের শনাক্ত করতে পুলিশের ওই সংস্থা তাদের এ অনুসন্ধানের তথ্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ গত এপ্রিলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, জাপানে একাকী বসবাসকারী প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা আগামী ২৫ বছরের মধ্যে অনেক বাড়বে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে একাকী জীবন কাটাতে হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে জাপানের বিভিন্ন পরিবারে ১ কোটি ৮ লাখ বয়স্ক মানুষ একা বসবাস করবেন; মোট পরিবারের হিসাবে এটি ২০ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, জাপানি তরুণ-তরুণীদের দেরিতে বিয়ে করার প্রবণতা বা অনেকের সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে প্রবীণদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনসংখ্যাগত সংকটের মুখে পড়েছে জাপান। সেখানে চিকিৎসা ও কল্যাণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বিপরীতে কমছে শ্রমশক্তি।

জাতিসংঘের হিসাবে, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রবীণ জনসংখ্যার দেশ জাপান।