মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির ছোট ছেলে কিম অ্যারিস তাঁর মাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। লন্ডনে বিবিসির বার্মিজ সংস্করণকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আমার মাকে এভাবে জেলে পড়ে থাকতে দিতে পারি না।’ এ ব্যাপারে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন অ্যারিস।
২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। তখন আটক হন সু চি। এরপর একের পর এক মামলায় সামরিক আদালত তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৩৩ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে।
ব্রিটিশ নাগরিক অ্যারিস বলেন, তাঁর মায়ের সম্পর্কে, তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তিনি এ ব্যাপারে মিয়ানমারের দূতাবাস, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর ও আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা কেউই সহযোগিতা করতে পারেনি।
এটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে অ্যারিসের দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকার। এর আগে ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর আটক ছিলেন সু চি। তখন অ্যারিস এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যারিস বলেন, ‘এর আগে আমি সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চাইতাম না, এ ব্যাপারে খুব একটা জড়াতাম না। রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটাই ভালো বলে মনে হয়েছে। আমার মা কখনো চাননি আমি রাজনীতিতে জড়াই। তবে এখন তাঁর বিরুদ্ধে কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কোনো যৌক্তিক আচরণ করছে না। আমি মনে করি, আমি কী চাই, সেটা প্রকাশ করা দরকার।’
এর আগে প্রায় ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দী থাকার পর ২০১০ সালে মুক্তি পান শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি। মিয়ানমার ও বিশ্বজুড়ে তাঁর এ মুক্তি উদ্যাপন করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে চুপ থাকায় তিনি সমালোচিত হন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার চলাকালে সু চি তাঁর দেশের পক্ষে সাফাই গাওয়ায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন।
তবে সেনা অভ্যুত্থানের আগে সু চির বিরুদ্ধে ওঠা এসব সমালোচনা নিয়ে বিবিসির করা প্রশ্নের জবাব দেননি অ্যারিস।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর সু চিকে শুরুতে গৃহবন্দী রাখা হয়েছিল। গত বছর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোর একটি কারাগারে তাঁকে নির্জন কারাবাসে নেওয়া হয়। প্রায় দুই বছর ধরে তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা যাচ্ছে না। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে গুঞ্জন থাকলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খবরটি অস্বীকার করেছে।
১৯৮৮ সালের আগপর্যন্ত ব্রিটিশ স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকতেন সু চি। ১৯৮৮ সালে অসুস্থ মায়ের সেবা করার জন্য মিয়ানমারে ফেরেন তিনি। তখন থেকে এ পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় সু চির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাটিয়েছেন অ্যারিস ও তাঁর ভাই।
মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে সু চি মিয়ানমারে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন শুরু করেন এবং ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নামের দলটি গড়ে তোলেন। ১৯৮৯ সালে তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়।
১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তা নিতে যেতে পারেননি সু চি। আশঙ্কা ছিল, একবার মিয়ানমার ছাড়লে আর ফিরতে পারবেন না। অ্যারিসের বয়স তখন ১৪ বছর। তিনিই তখন মায়ের পক্ষে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেন। ক্যানসারে আক্রান্ত স্বামীকেও দেখতে যেতে পারেননি সু চি। ১৯৯৯ সালে তাঁর স্বামী মারা যান।
অবশেষে ২০১০ সালে সু চি মুক্তি পাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে অ্যারিসের দেখা হয়। তখন তিনি মাকে উপহার হিসেবে ইয়াঙ্গুনের বাজার থেকে কেনা একটি কুকুরছানা দিয়েছিলেন।