ইরানে বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনা মাত্রা ছাড়িয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশটির ৫০০–এর মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিশেষত নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলা বিক্ষোভ দমাতে মৃত্যুদণ্ডকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে ইরান, এমনটাই অভিযোগ অধিকার সংগঠনগুলোর। খবর রয়টার্স ও এএফপির।
নরওয়েভিত্তিক সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) গতকাল সোমবার জানিয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ইরানে ৫০৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটিতে সর্বোচ্চ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩৩৩। আর ২০২০ সালে ইরানে ২৬৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য, চীনের পর বছরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে ইরানে। ২০২১ সালে দেশটি অন্তত ৩১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
বিক্ষোভ শুরুর পর ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছে আইএইচআর। গত রোববার দেশটিতে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগে সাত মাস আগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবারও ইরানের বিচার বিভাগ পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিন শিশুসহ আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র মাসুদ সেতায়েশি জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে বাসিল প্যারামিলিটারির সদস্য রুহুল্লা আজামিয়ানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।
এ ছাড়া ইরানে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় নারী–শিশুসহ আরও ২৬ জনের বিচার চলছে। আইএইচআরের আশঙ্কা, তাঁদেরও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
ইরানে একের পর এক মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে সংগঠনটির পরিচালক মাহমুদ আমিরি–মোঘাদাম বলেন, ‘যেসব মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই সুষ্ঠু বিচার পাননি। রুদ্ধদ্বার গোপন বিচারে অনেককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনেকের আপিল করারও সুযোগ ছিল না। তাই এসব মৃত্যুদণ্ডের অনেকগুলোরই আইনত বৈধতার ঘাটতি রয়েছে।’
মৃত্যুদণ্ডের বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইরান সরকার দেশটির জনগণের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন মাহমুদ। তিনি বলেন, বিক্ষোভের মাঝে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা চলছে। তাই ইরানে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা হঠাৎ বেড়ে গেছে। এমনকি নারীদেরও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে মাসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে বিক্ষোভ দমাতে কঠোর অবস্থানে গেছে ইরান সরকার। এ পরিস্থিতিতে এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে তাঁদের বিক্ষোভ থেকে দূরে রাখতে চায় ইরান সরকার। এ জন্য গ্রেপ্তার, বিচার ও মৃত্যুদণ্ডকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ডাকা তিন দিনের ধর্মঘট চলছে ইরানে। আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের ধর্মঘটে রাজধানী তেহরান, কারাজ, ইস্পাহানের মতো বড় শহরগুলোর অনেক বাণিজ্যিক কেন্দ্রে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। ছোট শহরগুলোতেও অনেক দোকানপাট বন্ধ ছিল।
ধর্মঘটের পাশাপাশি ইরানজুড়ে চলছে গ্রেপ্তারের ঘটনাও। দেশটির সংবাদমাধ্যম ফারস–এর উপপ্রধান সম্পাদক আব্বাস দারভিস তাভানগেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবি গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, উপপ্রধান সম্পাদককে গ্রেপ্তারের এক সপ্তাহের কম সময় আগে ফারস–এর ওয়েবসাইট সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল।